হঠাৎ অশান্ত টেবিল টেনিস

খেলোয়াড়-সংগঠক দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন কিছু নয়। বিশেষত, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই ইনডোর খেলা টেবিল টেনিস (টিটি) ও ব্যাডমিন্টনে দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের ঘটনা ঘটছে প্রায়শ-ই। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে টেবিল টেনিসের পুরনো সমস্যা আবারও নতুন করে উদয় হয়েছে।
টেবিল টেনিস খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে একটি সংবাদ সম্মেলন করে। আসন্ন এশিয়ান টিটি চ্যাম্পিয়নশিপে দল নির্বাচন নিয়ে সম্মেলনটি হলেও, পরবর্তীতে মূলত লক্ষ্যবস্তু ছিলেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি খন্দকার হাসান মুনীর সুমন। ফেডারেশনের এই সহ-সভাপতিকে নিয়ে খেলোয়াড়রা নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি তুলে ধরেন। বিশেষ করে আসন্ন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সিনিয়র খেলোয়াড় জাভেদ আহমেদকে বাদ দিয়ে জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন নাফিজকে নিয়ে যাওয়ার পেছনেও হাসান মুনীরের দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে টেবিল টেনিস খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি।
ভুক্তভোগী খেলোয়াড় জাভেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সিনিয়র চার শীর্ষ র্যাংকিংধারী খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে। আমার র্যাংক পাঁচ। মানস দা দ্বিতীয়, কিন্তু তিনি যাবেন না। ফলে আমার পজিশন চারে। আমাকে না নিয়ে ফেডারেশন জুনিয়র চ্যাম্পিয়নকে নিচ্ছে। যার মাধ্যমে আমার অধিকার হরণ করা হচ্ছে।’
জাভেদের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি হাসান মুনীরের যুক্তি, ‘১৯৯১ সালে একই টুর্নামেন্টে সিনিয়র সাইদুল হক সাদী ও নাসিমুল হাসান কচিদের সঙ্গে গিয়েছিলেন জুনিয়রসেরা মানস চৌধুরী। ২০২১ সালেও এই টুর্নামেন্টে পুরুষ ও মেয়ে দুই বিভাগেই র্যাংকিংধারী তিনজনের সঙ্গে একজন জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন গিয়েছেন। সেই থেকে নিয়ম করা হয়েছে। তাই এবারও শেখ কামাল জাতীয় যুব গেমসে চ্যাম্পিয়ন নাফিস ইকবাল ও খৈ খৈ সাই মারমাকে পাঠানো হচ্ছে। যা নির্বাহী কমিটি অনুমোদিত।’
এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের দল নির্বাচন ছাড়াও ফেডারেশনের অন্য সকল কর্মকাণ্ড নিয়েও খেলোয়াড়দের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সহ-সভাপতি মুনীর। সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জাভেদ আহমেদ বলেন, ‘তিনি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ঠিকমতো দেন না, ফিকশ্চারে নিজের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করেন। শুধু তাই নয়, খেলোয়াড়দের মধ্যে বিভাজনও তৈরি করেন তিনি। ফেডারেশনকে পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছেন।’
আরেক খেলোয়াড় অন্তু হাসান জয় আরেকটি অভিযোগ টেনে এনে বলেন, ‘গত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের সময় একটি ম্যাচ হারায় আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন হাসান মুনীর। যা একজন কর্মকর্তার জন্য শোভনীয় নয়।’
আকস্মিকভাবে খেলোয়াড়দের এই অভিযোগ উথাপন আবারও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। একজন কর্মকর্তা খেলোয়াড়কে চড় দেবেন সেটা নিন্দনীয় কাজ। এমন কাজের প্রতিবাদ তখন না করে এক বছর পর কেন এই প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, ‘আমি তখন জুনিয়র খেলোয়াড়। তখন এর প্রতিবাদ করলে আমার ক্যারিয়ার হুমকির মধ্যে পড়ত। তাই টিটির স্বার্থেই কিছু বলিনি।’
জাভেদ এশিয়ান দলে বাদ পড়ায় খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি উদ্যোগী হয়েছে। গত বছর দেশসেরা দুই নারী খেলোয়াড়কে বহিস্কার করেছিল ফেডারেশন। যা সারা দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করে। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ এই ব্যাপারে সোচ্চার থাকলেও টিটি খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি ছিল নিশ্চুপ। এর কারণ প্রসঙ্গে জাভেদ বলেন, ‘আমরা এগিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, সেই সময় তারা (সোমা ও মৌ) অনুরোধ করেছিল যে তাদের সঙ্গে ফেডারেশনের আলোচনা চলছে। তাই আমরা আর পদক্ষেপ নিইনি।’
খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির অভিযোগগুলো সুমন খন্ডিয়েছেন এভাবে, ‘খেলোয়াড় নির্বাচন হয় র্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে, সেজন্য নির্দিষ্ট কমিটি রয়েছে। এর সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। সিদ্ধান্ত যা হয় সকল কিছুই নির্বাহী কমিটিতে। ২০০৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আমার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালোই ছিল। কিন্তু যখনই নিয়মের বেড়াজালে পড়ে গেলেন তারা, তখনই আমি তাদের কাছে খারাপ হয়ে গেলাম।’
ফেডারেশনের নির্বাচন সামনে রেখে অনেক সময় খেলোয়াড়রা সক্রিয় হন। টিটিতে সামনে নির্বাচন। আজ সম্মেলনে সেই আঁচও মিলল, ‘আমরা খন্দকার হাসান মুনীর সুমনকে ফেডারেশনে আর দেখতে চাই না। এর জন্য যা প্রয়োজন তাই করব’, বলেন খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিপন খান। বর্তমানে সমিতির সভাপতি তারকা খেলোয়াড় ও কয়েকবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মানস চৌধুরি। তিনি আজকের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। সম্মেলন শুরু হয় তার এক ভিডিও বার্তা দিয়ে।
এজেড/এএইচএস