১৪ বছর বয়সে তাক লাগানো অর্জন বাংলাদেশের রুশোর
বয়স মাত্র ১৪। এই বয়সেই জটিল সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এই কিশোর। সমাধান করছে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সব অঙ্ক ও বিজ্ঞানের নানা সূত্র। এই কিশোরের পুরো নাম মাহির আলি রুশো।
রাজধানীর মনিপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুশো। তার এমন সব আগ্রহ দেখে উচ্ছ্বসিত তার বাবা-মা, স্কুলের শিক্ষকরা। তারা চান, রুশোর প্রতিভার আরও বিকাশ, দেশ এমন কি বিশ্ব দেখুক, বাংলাদেশের এক ক্ষুদে বালক তার গাণিতিক আর বৈজ্ঞানিক সমাধানে অন্য সবাইকে হার মানাচ্ছে।
রুশোর বাবা-মা দুজনই চিকিৎসক। ছেলের ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞান আর গণিতের প্রতি ঝোঁক দেখে কিছুটা অবাক হয়েছেন তারা। প্রথম দিকে নিজেরাও বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু যখন দেখলেন, একের পর এক জটিল এবং উচ্চ পর্যায়ের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করছেন, তখন তারা ছেলের প্রতিভা বিকাশ করতে তার হাতে তুলে দিতে থাকেন বইপত্র। তারা চান, ছেলে যা করছে, সেটা করুক। একদম জেনে-বুঝে অর্থাৎ তার জানা-শোনায় যেন কোনো ফাঁকফোকর না থাকে।
রুশোর প্রতিভার কথা বলতে গিয়ে তার বাবা সেন্ট্রাল মেডিকেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সে যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, তখন থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল। সে সময় আমার একটা ল্যাপটপ ছিল, সেটাও খুব বেশি ভালো ছিল না। কিন্তু একটা পর্যায়ে আমি খেয়াল করি, সে আমার ল্যাপটপে ভিডিও দেখছে। এসব ভিডিও ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথের ভিডিও। আর সবগুলো তার চেয়ে অনেক আপার লেভেলের। সেসব ক্লাসের ভিডিও দেখে।’
তিনি বলেন, ‘এরপর আমি একদিন তাকে ডেকে নিয়ে বলি, বাবা তুমি যেসব ভিডিও দেখো সেসব কী তুমি বোঝো, নাকি শুধু দেখো? তার উত্তর ছিল, বাবা আমি এসবই বুঝি। তারপর তার সঙ্গে কয়েক দিন আমি নিয়মিত কথা বলি। দেখলাম আসলেই সে বোঝে।’
সে সময় রুশো তার বাবা-মায়ের কাছে একটি আবদার করে বসে। সে প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা ইউটিউবে ভিডিও দেখতে চায়। প্রথমে বাবা-মা এত সময় ভিডিও দেখায় কিছুটা আপত্তি করলেও বলে, দেখতে পারবে শর্তে— প্রতিদিনের পড়ালেখা ঠিকভাবে করে সকালে এক ঘণ্টা এবং রাতে এক ঘণ্টা করে ইউটিউব দেখতে পারবে। তাতেই রাজি হয় রুশো।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তার বয়স যখন ১১ বছর, তখন সে ক্যালকুলাস এবং জ্যামিতিক বিভিন্ন সমাধান রপ্ত করে ফেলে। ১২ বছর বয়সে কলেজ পর্যায়ের গণিত ও ফিজিক্স অনায়াসে করতে পারত রুশো।’
এই জানাশোনার বিষয়টা আরও বেড়ে যায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় স্কুল বন্ধ হলে। তখন অনেক বেশি সময় রুশো বিজ্ঞানের এসব বিষয়ে জানতে ব্যয় করতে থাকে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে সে অনলাইনে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, ক্যালকুলাস, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বিষয়ে অসংখ্য অনলাইন কোর্সে অংশ নেয়।
তার মধ্যেই রুশো জানতে পারে অনলাইনে ‘সেন্ট জোসেফ ন্যাশনাল পাই অলিম্পিয়াড’ সম্পর্কে, অংশ নেয় এবং হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন। তার মনোবল বেড়ে যায়। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনলাইন কোর্সে অংশ নিতে থাকে। এখন পর্যন্ত রুশো ৫০টিরও বেশি অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করেছে বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ অন্যতম।
রুশোর মা চিকিৎসক রুমা আক্তার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখেছি তার পড়ালেখার প্রতি ভীষণ ঝোঁক। আমার জন্য যখন কোনো বই কিনেছি, তখন তার জন্যও আমি বই কিনেছি। আসলে সন্তানকে বুঝতে হবে। সে কি চায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় তার চাওয়ার থেকে আমাদের চাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দেই, যা তাদের বিকাশকে বাধা দেয়।’
কিশোর মাহির আলি রুশো তার অর্জনে গর্বিত। তার কাছে মনে হয়, সায়েন্স আসলে ভয়েস অব গড, যার মধ্যে ডমিনেন্ট করে ফিজিক্স। আর এর মূলে রয়েছে ম্যাথ। যা জানার কোনো বিকল্প নেই।
আলাপকালে জানায়, সে আসলে কোনো কিছু কীভাবে, কেমন করে হচ্ছে সেটা জানতে চেয়েছে। আর এর জন্য অবশ্য পড়াশোনা করা এবং জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
রুশো বলে, ‘কেউ কাউকে শেখাতে পারে না। নিজে থেকে শিখতে হয়। আমাদের সবসময় অ্যাকাডেমিক বইয়ের বাইরে পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। কেননা, আমরা নিজের বই তো পড়বই, তার বাইরে সেটা কেন হচ্ছে তা জানতে অন্য বইও পড়ব। আমরা আসলে যা পড়ি সেটা খুব শর্টকাট। সেখানে গভীরভাবে কোনো কিছু দেখানো হয় না। তাই সেটা জানতে হলে পড়াশোনার বিকল্প নেই।’
বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও অর্জন
এই ক্ষুদে জিনিয়াস দেশে ও দেশের বাইরের অসংখ্য প্রতিযোগিতা ও অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ওপেন কনটেস্ট অলিম্পিয়াডে রুশোকে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারদের সঙ্গে এবং রুশো প্রায় সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
‘ওয়ার্ল্ড গ্লোবাল চাইল্ড প্রডিজি অ্যাওয়ার্ড কমিটি’ মাহির আলি রুশোর সম্মানসূচক অর্জনগুলোর প্রশংসা করেছেন। কমিটি জানিয়েছে, তারা রুশোকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
সেন্ট জোসেফ ন্যাশনাল পাই অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে নটরডেমের শিক্ষার্থীকে হারিয়ে হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ ম্যাথম্যাটিকস অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, জামাল নাল কেমিস্ট্রি অলিম্পিয়াড চ্যাম্পিয়ন এবং জামাল নাক্রল জ্যোতির্বিদ্যা উৎসব, ন্যাশনাল সাইবার অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ জ্যোতির্বিদ্যা অলিম্পিয়াডসহ অসংখ্য প্রতিযোগিতায় আঞ্চলিকভাবে বিজয়ী হয়েছে রুশো।
এছাড়া বাংলাদেশ আইকিউ অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে এবং ইন্ডিয়ার- সিপিএস অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের হয়ে এ প্রতিনিধিত্ব করে। সে বাংলাদেশ বিজ্ঞান সংগঠন থেকে ‘গুগল-আইটি অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন পদক পায়। ‘Higsinno Biology Olympiad’ বিজয়ীও হয় সে।
তাছাড়া সেন্ট জোসেফ থেকে সুডোকু উৎসব, বাংলাদেশ সায়েন্স কংগ্রেসের সারাদেশের মধ্যে পদার্থবিদ্যা এবং “Photographing describing Contest এর চূড়ান্ত বিজয়ী, ‘Netrophill Science Olympiad Astronomy: বাংলাদেশ রোবট Knock-out round সহ অসংখ্য প্রতিযোগিতায় এ বিজয়ী হয় এবং পরিচিতি লাভ করে।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং অর্জন
দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ‘Online Physics Olympiad-2021’ এ তার দল Invitational Round বিজয়ী; তার অধিনায়কত্বে ১৫ জনের সদ্যসদ্যের একটি দল আন্তর্জাতিক “Perple Math Comet Met” প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করে।
ইন্ডিয়ায় জ্যোতির্বিদ্যার সর্বোচ্চ আসর আইওএসএ-২০২১ এ একক প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জন করে এবং আন্তর্জাতিক আসরে “School Connection Math, Science And Artificial Intelligence Contest" এ পায় স্বর্ণপদক। “Stemco international Physics, Chemistry, Biology” প্রদত্ত বিষয়ে “Besty Award” পায় এবং সেরা মেধা তালিকায় থাকার গৌরব অর্জন করে রুশো।
দেশ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা “Owlpya Science and Tech Contest” এ পরপর দুইবার রৌপ্য পদক, একবার স্বর্ণপদক এবং দুইবার ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে বিজয়ী হন এবং বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের জন্য ২০২২ সালের জুনে যুক্তরাজ্য সফরের জন্য আমন্ত্রণপত্রও পায়।
সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলিম্পিয়াড ‘Genius Cerebrum Olympiad’ থেকে আর্ট, জেনারেল নলেজ এবং সাইবারে জিনিয়াস পদক পায়।
এছাড়া সম্প্রতি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্নাতকোত্তর স্টুডেন্ট কর্তৃক চালিত “International Leadership ethics and life skill Olympiad” দ্বারা শ্রেষ্ঠ ৫০ জনের মেধা তালিকায় থাকার গৌরব অর্জন করে।
ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথ চ্যালেঞ্জের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তার শতকরা গণিতের নম্বর একজন যুক্তরাজ্যের উচ্চ বিদ্যালয়ের স্টুডেন্টের চেয়ে অস্বাভাবিক রকম ভালো। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ফাউন্ডেশনের বেসরকারি অলিম্পিয়াড ইন্টারন্যাশনাল জিকে অলিম্পিয়াডে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণ পদক এবং গণিত অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন। সে পরিবেশ বিজ্ঞানেও অধিক সচেতন, তিনি বাংলাদেশ ক্লাইমেট সায়েন্স অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক বিজয়ী এবং উইজডম একাডেমি ক্লাইমেট ফেয়ার-২০২১ এর ন্যাশনাল বিজয়ী।
গবেষণা ও প্রকাশনা
এরই মধ্যে রুশো ৫০টিরও বেশি অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স শেষ করেছে এবং এমআইটি, হার্ভার্ড, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সনদ লাভ করে। বর্তমানে সে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ক্যামব্রিজের আওতায় ম্যানুফ্যাকচার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মাইক্রোমাস্টার্স কোর্সে অধ্যয়নরত আছে। একই সঙ্গে বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে কেমিস্ট্রি বিষয়ে মাইক্রোমাস্টার্স কোর্সে সুযোগ করে নিয়েছে। সে ১৪ বছর বয়সে আইজেএসআর, আইওএসআর, কোয়েস্ট-এ অনেক সম্মানিত জার্নাল প্রকাশ করেছে এবং গবেষণাপত্র লিখেছে।
তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা পত্রগুলো
১) Implementation and development of a room light controller using ARDUINO and RFID for any school, college or university was published in 8 International Journal that included
International Journal of Science & Research (IJSR-Paper ID SR 22313191505, Volume 11, Issue 3, March 2022),
International Journal of Advances in Engineering and Management (IJAEM Article ID: IJAEM-9301) and selected as the most impactful top 3 research.
International Research Journal (IRJ-March 2022 issue)
American Journal of Engineering Research (AJER-manuscript ID-AJERAD113026) •
International Journal of Innovative Science and Research Technology (IJISRT. ISSN No:
2456-2165. Paper ID: IJISRT 22 MAR623) • American Academic Scientific Research
Journal for Engineering, Technology and Science (ASRJETS. Manuscript number ID-
7564) • International Journal of Engineering Research and Development (IJERD. Paper
ID-AB113010)]
২) Second research paper on math (collatz conjecture-A case study in mathematical problem solving was publish in 3 international journals
• IOSR journal of mathematics
•IJSR (Volume 11, Issue 4, April 2022).
• Quest Journal (Volume 8, Issue 4)
৩) Third Research Paper on Physics (The physics of time travel)
was publish in IJSR-international journal science and research (Volume 11, Issue 4, April 2022), QuestJournal , IJRES Journal acceptance
8) Fourth Research paper "Quantum Dream: A connection between you and your mirror universe
already published in Quest journal, IJSR, IJRES Journal acceptance and publication
৫) 5'th Research Paper On“Zaman Giant Equation “ [ Dedicated to his Grandparent Mr. Assadur Zaman , A unique theorem ]
[Published In IJSR, Quest journal]
৬) 6th research paper on “The Ultimate Proof of Collatz Conjecture will be published in IJSR journal, Quest journal in the following Month [A 83 year old unsolved problem]