ক্ষুব্ধ গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা, কাস্টমার কেয়ারে ভিড়-উত্তেজনা
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে ফোন করতে পারছিলেন না সারা দেশের গ্রামীণফোন গ্রাহকেরা। শুধু ফোনকল বা ক্ষুদে বার্তা নয়, মোবাইলের ডাটা দিয়ে ইন্টারনেটও ব্যবহার করতে পারছিলেন না তারা। দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি দাবিদার এই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা এতে চরম ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়েছেন।
দীর্ঘ সময় ধরে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় সার্ভিস সেন্টারগুলোতে ভিড় করতে দেখা গেছে অনেক গ্রাহককে। এসময় গ্রাহকেরা কাস্টমার সেন্টারের ম্যানেজারদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান।
দুপুরের পর থেকে কিছুটা ফিরতে শুরু করলেও বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পুরোপুরি সচল হয়নি গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক।
তবে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সকাল থেকে নেটওয়ার্ক না থাকায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে মতিঝিল কাস্টমার কেয়ারে ঢোকেন বিকাশ এজেন্ট সহিদ উল্লাহ। তিনি দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে ক্ষোভের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। তিনি জানান, নেটওয়ার্ক একেবারেই নেই, ডাটা ব্যবহার করতে পারছি না, কোথাও কল যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘ব্যবসার কাজে প্রতিদিন অনেক কল ও ডাটা ইউজ করতে হয়। কিন্তু হঠাৎ করে সব হাওয়া হয়ে গেল। কোনো নেট-ডাটা নেই। কোনো তথ্যও পাচ্ছিলাম না। পরে কাস্টমার কেয়ারে থেকে জানালো কোথায় যেন অপটিক্যাল ফাইবার কেটে গেছে। কিন্তু এমন হলে তাদের বিকল্প ব্যবস্থা কেন থাকবে না, এটা থাকা জরুরি।’
এদিকে অনেকেই মোবাইল ফোনে সমস্যা মনে করে বেশ কয়েকবার সিম পরিবর্তন ও ফোন রিস্টার্ট করেছেন। তারপরও কোনো সমাধান না পেয়ে নিকটস্থ গ্রামীণ ফোনের সার্ভিস পয়েন্ট কিংবা কাস্টমার কেয়ারে ভিড় করছেন।
পল্টন কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে নূর ইসলাম নামে এক গ্রাহক নেটওয়ার্ক না থাকার বিষয়ে জানতে চান। সে সময় কাস্টমার কেয়ার থেকে তাকে ফাইবার অপটিক ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা বলা হয়। একই ধরনেরপ্রশ্ন নিয়ে তখন কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কিছুটা বাগবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায় কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজারদের।
শুধু পল্টনে নয়, মতিঝিল, হাতিরপুল, সীমান্ত স্কয়ার, মালিবাগ, কল্যাণপুর, মহাখালী, মিরপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সার্ভিস পয়েন্ট কিংবা কাস্টমার কেয়ারগুলোতে গ্রাহকের ভিড় দেখা গেছে।
পল্টন এলাকার বাসিন্দা ও গ্রামীণফোনের গ্রাহক সারওয়ার হোসেন সাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে নেটওয়ার্ক ছিল। কিন্তু ১০টা-সাড়ে ১০টার পর থেকেই আর নেটওয়ার্ক ছিল না। আমি প্রথমে মনে করেছিলাম মোবাইলে সমস্যা। দীর্ঘ সময় নেটওয়ার্ক না থাকায় বিপদেই পড়তে হচ্ছে। আমি এয়ারপোর্ট যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে এক লোকের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। তিনি দুবাই থেকে কিছু জিনিস নিয়ে এসেছেন। এখন কী ভাবে তাকে পাবো, বুঝতেছি না। পড়ে গেলাম মহাবিপদে।
মহাখালী বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালক আনিসুল হক আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যে কোন দেশে আছি বলতে পারছি না। আমার টাকায় কেনা সিমেও নেটওয়ার্ক নেই। সার্ভিস দিতে পারবে না, তাহলে কোম্পানি চালায় কেন? দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বসে আছি কোনো কল পাচ্ছি না। ঘণ্টায় কম পক্ষে ২টা ক্ষ্যাপ মারতে পারতাম। আর সেখানে বসে আছি। নেটওয়ার্ক সমস্যা আজকের দিনটাই নষ্ট করে দিল।
বনানী এলাকার বিকাশ ব্যবসায়ী নিশাৎ মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে দোকান খুলে নেটওয়ার্ক পেয়েছি। কিন্তু সাড়ে ১০টার পর থেকে গ্রামীণ ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। আমার ব্যবসা তো নেটওয়ার্কের ওপরে চলে, এ কারণে অনেকগুলো কাস্টমার বিদায় করে দিতে হয়েছে। ২-৩ লাখ টাকা বিকাশ করতে পারলে কিছু একটা তো লাভ হতো। এখন তো সেটা হলো না। তবে অন্যান্য নেটওয়ার্ক ঠিক আছে।
‘শুধু কি ফাইবার অপটিক ক্যাবল বিচ্ছিন্ন, না অন্য কোনো সমস্যা রয়েছে’, -আপনি কী মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তারা (গ্রামীণফোন) বলছে তাদের ফাইবার কাটা গেছে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে। মেইন ফাইবার ত্রুটি হলে অন্যান্য অপরেটরের সমস্যা হওয়ার কথা। ওরা ফাইবার ব্যবহার করে ৭০ শতাংশ। বাদ-বাকীটা তারা মাইক্রো ওয়েব দিয়ে চালায়। ফাইবার ক্যাবল কাটার কারণে ওদের সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, এটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। তারা বলছে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জে ফাইবার কাটা গেছে, তাহলে নেত্রকোণায় কেন তাদের সমস্যা হবে, সুনামগঞ্জে কেন সমস্যা হবে? সারা বাংলাদেশে সমস্যা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিটিআরসির একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত। সুষ্ঠু তদন্ত করা দরকার, আসলে কেন এই ঘটনাটা ঘটল। ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা আসতে পারে। তাই এর গভীরে খোঁজ নেওয়া দরকার।’
এদিকে নেটওয়ার্ক বিপর্যয় প্রসঙ্গে গ্রামীণফোন এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, ‘আমাদের বিশেষজ্ঞদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় ফাইবার অপটিক ক্যাবলজনিত সমস্যা আমরা সমাধান করতে পেরেছি। সব সেবা এখন স্বাভাবিক আছে।’
এমএসআই/এসএম