বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্টে ৫২ স্টার্টআপ পেল ৭ কোটি টাকা
স্টার্টআপদের অনুপ্রাণিত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে “উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (আইডিয়া)” তৃতীয় বারের মত আয়োজন করে “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ)”।
এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য হল তরুণ উদ্যোক্তা অর্থাৎ স্টার্টআপদের উদ্ভাবনী ধারণাকে উৎসাহিত করে দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা। “ডেয়ার টু স্ট্যান্ড বিগ” স্লোগানটি নিয়ে আয়োজিত বিগ ২০২৩ এর সারাদেশে ক্যাম্পেইন শেষে প্রাথমিক পর্যায়ে ৬৮৪৬টি স্টার্টআপ ও উদ্ভাবক এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করে।
সবশেষে বিগ ২০২৩ এর সেরা স্টার্টআপ হিসেবে যৌথ বিজয়ী হয় “ফ্যাব্রিক লাগবে লিমিটেড” এবং “মার্কোপলো এআই”। ওয়ান বিগ উইনার ২০২৩ হিসেবে এই যৌথ বিজয়ীর প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়া সেরা ৫০টি স্টার্টআপের প্রত্যেকেই ১০ লক্ষ টাকা করে মোট ৫ কোটি টাকার অনুদান পায়। অর্থাৎ সেরা ৫২টি স্টার্টআপকে মোট ৭ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শনিবার বিগ ২০২৩ এর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় তিন ঘণ্টার জমকালো একটি অ্যাওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় “বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ) ২০২৩” এর এবারের আসর।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, এমপি। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মোঃ আলতাফ হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, যেকোনো দেশ সফল হতে হলে আমাদের ইতিহাস জানতে হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন যে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিনণত হওয়া সম্ভব না। কিন্তু আমরা সেটা সম্ভব করেছি। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা কিভাবে পৌঁছে যাবো সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সরকারের কাজ হলো অনুকুল পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া আর বেসরকারি খাতকে সুযোগ দিয়ে দেওয়া। অনুকূল পরিবেশ পেলে “আমরা পারি”। ফ্রিল্যান্সারদের জন্যে আইডি কার্ড এর ব্যাবস্থা করা হয়েছে যার মাধ্যমে ব্যাংক লোন সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ গ্রহণ করতে পারছে তারা।
সভাপতির বক্তব্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, সকলের সম্মিলিত চেষ্টার ফসল হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা ২০১৫ সালের শুরু থেকে ১০ বছরে প্রায় ৪শত স্টার্টআপ আইডিয়া প্রকল্প থেকে ফান্ড করেছিলাম। এর থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ স্টার্টআপ এখনও বেঁচে আছে ও লড়াই করে টিকে আছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ স্টার্টআপ প্রি-সীড এবং গ্রোথ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। আমরা জাতি হিসেবে সাহসী। বঙ্গবন্ধু অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা চালু করেছি বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ৩টি। সেগুলো হচ্ছে ইনোভেশন ইকোসিস্টেম, উদ্যোক্তা সাপ্লাই চেইন তৈরি করা এবং স্টার্টআপ কালচার ডেভেলপ করা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা স্টার্টআপ পলিসি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছি। পলক বলেন আমাদের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে আরো ৫টি বিলিয়ন ডলার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি স্টার্টআপ খাতের ত্রিশ লক্ষ তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
এবারের বিগ ২০২৩ এ প্রাথমিকভাবে ৬টি স্ক্রিনিং টিম গঠন করে নিবন্ধিত স্টার্টআপদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ২২৪টি স্টার্টআপকে অনলাইন পিচিং রাউন্ড এর জন্য নির্বাচন করা হয়। অবশেষে, ৫টি প্যানেলে অনলাইন পিচিং রাউন্ড শেষে মোট ১০৩টি স্টার্টআপ যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে অনুষ্ঠিত বিগের ৩দিনব্যাপী বুটক্যাম্পে গত ৯-১১ জুন তারিখে অংশ নেন।
পরবর্তীতে ৫টি প্যানেলের জাজিং রাউন্ড শেষে পাওয়া যায় ৫২টি সেরা স্টার্টআপ। সবশেষে, যৌথ বিজয়ী “ওয়ান বিগ উইনার ২০২৩” সহ অন্যান্য বিজয়ী স্টার্টআপদের সম্মাননা প্রদানসহ তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। যৌথ বিজয়ীদের ফ্যাব্রিক লাগবে লিমিটেড থেকে ফাউন্ডার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম ও কো-ফাউন্ডার রাজিয়া সুলতান এবং মার্কোপলো এআই থেকে ফাউন্ডার তাসফিয়া তাসবিন ও রুবাইয়্যাত ফারহান ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন। বিগ ২০২৩ গ্র্যান্ড ফিনালে আকর্ষণীয় করে তুলতে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় ভেন্যু এবং আরো ছিল নানা প্রকার আয়োজন।