এইচপি থেকে চাকরি হারাবেন ৬ হাজার কর্মী

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এইচপি আগামী তিন বছরের মধ্যে বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাইয়ে যাচ্ছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, ২০২৮ অর্থবছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হবে।
সংস্থার পরিচালনা কাঠামো সহজ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–নির্ভর প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রস্তুতিও চলছে।
মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন এইচপির প্রধান নির্বাহী এনরিক লোরেস। তিনি বলেন, “পণ্য উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ও গ্রাহকসেবায় আমরা বড় পরিবর্তন আনছি। এসব ক্ষেত্রেই ছাঁটাইয়ের প্রভাব পড়বে।”
লোরেস জানান, নতুন উদ্যোগের ফলে তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় আশা করছে। তবে এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও এক থেকে দুই হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল এইচপি।
এদিকে বাজারে চাহিদা বাড়ছে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–সক্ষম ব্যক্তিগত কম্পিউটারের। এইচপি বলছে, গত অক্টোবর শেষে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে তাদের মোট কম্পিউটার সরবরাহের ৩০ শতাংশের বেশি ছিল এআই–চালিত পিসি। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, ভবিষ্যতে এই চাহিদা আরও বাড়বে এবং কোম্পানির পণ্যবিন্যাসে বড় পরিবর্তন আনবে।
তবে সামনে কিছু ঝুঁকিও দেখছে বাজার বিশ্লেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের মর্গান স্ট্যানলির বিশ্লেষকদের মতে, ডেটা সেন্টারে ব্যবহৃত এআই অবকাঠামোর চাহিদা বাড়ায় বিশ্বব্যাপী মেমোরি চিপের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই দামবৃদ্ধি এইচপি, ডেল, অ্যাসারসহ বিভিন্ন কম্পিউটার নির্মাতার খরচ বাড়াতে পারে। এতে তাদের মুনাফায় চাপ তৈরি হতে পারে।
লোরেস বলেন, ২০২৬ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই এই প্রভাব স্পষ্ট হবে। তবে প্রথমার্ধের জন্য পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছি। খরচ কমাতে কম দামের সরবরাহকারী খুঁজছি। কিছু মেমোরি কনফিগারেশন কমানো হবে। প্রয়োজনে পণ্যের দামও সামঞ্জস্য করা হবে।”
২০২৬ অর্থবছরের জন্য সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফার পূর্বাভাস দিয়েছে ২ দশমিক ৯০ থেকে ৩ দশমিক ২০ ডলার। বাজার বিশ্লেষকেরা যেখানে ৩ দশমিক ৩৩ ডলার আশা করেছিলেন, সেখানে এই পূর্বাভাস আশানুরূপ নয়। প্রথম ত্রৈমাসিকেও শেয়ারপ্রতি আয়ের পূর্বাভাস ৭৩ থেকে ৮১ সেন্ট। বিশ্লেষকদের মধ্যবর্তী পূর্বাভাস ছিল ৭৯ সেন্ট।
তবে কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে এইচপির আয় হয়েছে ১৪ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। যা বাজারের পূর্বাভাস ১৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি।
এইচপি বলছে, কর্মী ছাঁটাই ও খরচ কমানোর মাধ্যমে তারা নতুন এআই–কেন্দ্রিক পণ্য ও প্রযুক্তি উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করতে পারবে। লোরেসের মতে, ভবিষ্যতের বাজারে টিকে থাকতে এবং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে এসব পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতে একের পর এক ছাঁটাইয়ের মধ্যে এইচপির ঘোষণা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে কর্মীদের মধ্যে। অনেকেই মনে করছেন, এআই–কেন্দ্রিক নতুন প্রযুক্তি আসার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির ধরন ও সুযোগ বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এআই–নির্ভর অপারেশনই ভবিষ্যতে টিকে থাকার পথ।