গ্রাহক নিরাপত্তায় বিটিআরসিতে সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাইবার জগতের কনটেন্ট মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) নতুন করে ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কন্টেন্ট ও ছবি আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার।
বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশই সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট মুছে ফেলার প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারেনি। যা করা সম্ভব, তা হলো দেশে পুরো ইউটিউব ও ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া।
বিটিআরসির সীমাবদ্ধতার তুলে ধরে তিনি বলেন, বিটিআরসি কেবল ইউটিউব ও ফেসবুকেকে কোনো কনটেন্ট সরাতে অনুরোধ করতে পারে। যদি সে কনটেন্ট তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড পরিপন্থী হয়, তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা অপসারণ করে, নয়তো করে না।
আইনশৃংখলা বাহিনী বা সরকার কিংবা আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি ব্যবস্থা নেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্টারনেট জগতে কোনো কিছু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। অপরাধীরা বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিটিআরসি প্রতিনিয়ত অনলাইন মনিটরিং করছে, এ ক্ষেত্রে আমাদের জনবলের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে কীভাবে সাইবার জগতকে অধিক নিরাপদ করা যায় সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি আভ্যন্তরীণ যেকোনো ওয়েবসাইট, লিংক বা ব্লগ কিংবা সংশ্লিষ্ট অনলাইন কনটেন্ট বন্ধ/সাময়িক স্থগিত বা অপারেশনাল কার্যক্রম সীমিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার জগতে অপ্রীতিকর ঘটনা বাড়ছে। এতে অনেকের সামাজিক ও পারিবারিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী, ধর্মীয় উসকানিমূলক বা এ সংক্রান্ত কোনো কনটেন্ট অপসারণ কিংবা বন্ধ করার অনুরোধ পাওয়া সাপেক্ষে বিটিআরসি কারিগরি ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অতএব, কেউ সামাজিক মাধ্যম দ্বারা ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তা নিলে বিটিআরসি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ৮ ধারা এর (১ ও ২) উপধারা অনুযায়ী আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালকের মাধ্যমে ডিজিটাল মাধ্যম থেকে কনটেন্ট অপসারণ বা ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করবে।
এরপর বিটিআরসি অবমাননাকর পোস্ট এবং আপত্তিকর কনটেন্ট সরাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কনটেন্ট রিপোর্টিং সিস্টেমের (সিআরএস) মাধ্যমে অনলাইনে অনুরোধ জানায়। এরপর তারা তাদের গাইডলাইন অনুযায়ী কনটেন্ট অপসারণ করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারের অনুমোদনক্রমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমে (ডট) স্থাপিত সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স (সিটিডিআর) নামক কারিগরি সিস্টেমের মাধ্যমে আপত্তিকর ওয়েবসাইট, ডোমেইন ও ব্লগ বন্ধ করার কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। ইতোমধ্যে সিটিডিআরের মাধ্যমে ২২ হাজার পর্নোগ্রাফি ও জুয়ারি সাইটে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।
গত এক বছরে বিটিআরসি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ১৮ হাজার ৮৩৬টি লিংক অপসারণের অনুরোধ করে যার মধ্যে ৪ হাজার ৮৮৮ লিংক অপসারণ করা হয় এবং ইউটিউবে ৪৩১টি লিংক বন্ধ করার অনুরোধের প্রেক্ষিতে ৬২টি লিংক বন্ধ করা হয়। এছাড়া সিটিডিআরের মাধ্যমে এক হাজার ৬০টি ওয়েবসাইট ও লিংক বন্ধ করা হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেকেই অপব্যবহার করছে, আপত্তিকর কনটেন্ট, ভিডিওর ফলে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে, দেশি বিদেশি অপশক্তিকে প্রতিহত করতে অনলাইনের ক্ষতিকর উপাদান অপসারণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে কমিশনার (স্পেকট্রাম) এ. কে. এম শহীদুজ্জামান, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসাইন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল আলম, মহাপরিচালক (ইঅ্যান্ডও) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবির, মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং) আশীষ কুমার কুন্ডু, মহাপরিচালক (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) প্রকৌশলী মো. মেসবাহুজ্জামানসহ বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
একে/ওএফ