তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সজাগ থাকার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার ও জালিয়াতি রোধে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রযুক্তিবিদকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বঙ্গভবনের গ্যালারি হল থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে আয়োজিত চারদিনব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশ্ব সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন আইটি-২০২১’ এবং ‘অ্যাসোসিও ডিজিটাল সামিট-২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় এই আহ্বান জানান।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি একদিকে যেমন আমাদের জন্য অবারিত সুযোগের দ্বার উন্মোচিত করেছে, তেমনি এর অপব্যবহার ও জালিয়াতির কারণে অনেক চ্যালেঞ্জেরও জন্ম দিয়েছে।’
তথ্য প্রযুক্তির বিনিময় ও হস্তান্তর বৈশ্বিক উন্নয়নের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবন বা আমদানিই যথেষ্ট নয় বরং এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।’
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন ‘সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা স্থানীয় টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রসার এবং ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।’
তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা, পেশাজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অগ্রগামী প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।’
বাঙালি জাতির ইতিহাসে ২০২১ সাল একটি অনন্য ও স্মরণীয় বছর উল্লেখ করে হামিদ বলেন, এ বছর আমরা একই সঙ্গে উদযাপন করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী।
তিনি জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ২০০৯ সালে দেশের মাত্র ৮ লাখ মানুষ ইন্টারনেট সেবা পেত। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১২ কোটির বেশি। এ সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে চার গুণের বেশি।
আব্দুল হামিদ বলেন, এ বছরেই পূরণ হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, দূরদর্শী চিন্তা থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান গবেষণা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেছিলেন। তারই উদ্যোগে ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্য পদ লাভ করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কিন্তু, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পথ চলা থেমে যায়।
দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে তথ্যপ্রযু্ক্তি বিকাশে অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফোনের মনোপলি ভেঙ্গে তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সরকার বিগত এক যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভ-কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্ণমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির অগ্রগতিকে ঘিরে নেওয়া অধিকাংশ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। ফলে, দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে।’
শহর ও গ্রামের মধ্যে ডিজিটাল বিভক্তি কমে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল যন্ত্রকে হাতের নাগালে আনার পাশাপাশি মানুষের হাতের মুঠোয় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জনগণ এখন ঘরে বসেই দুই শতাধিক নাগরিক সেবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাচ্ছেন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন,‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার প্রমাণ মহামারীর দুঃসময়ে তথ্য-প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘দেশের শিক্ষা কার্যক্রম, বিচারিক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং সেবাসহ অনেক কিছুই এখন তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দেশে গড়ে উঠছে ডিজিটাল অর্থনীতি। আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। আইটি খাতে রফতানি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে এ আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে এবং জিডিপিতে সফটওয়্যার ও আইসিটি সেবাখাতের অবদান ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।’
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশজুড়ে গড়ে তুলেছে ৩৯টি হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার।’
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে সারাবিশ্বে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ডাক্তার মো. আব্দুল মান্নান, উইটসার চেয়ারম্যান ইয়ানিস সিরোস এবং বিসিএস সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ-উল-মুনীর অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
সূত্র : বাসস
আইএসএইচ