কুষ্টিয়ার আকর্ষণীয় ৬ জায়গা
বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি জেলা কুষ্টিয়া। জেলাটি গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বে সমৃদ্ধ কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়া, রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, মীর মশাররফ হোসেনের বাসগৃহসহ আরও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। চলুন এক নজরে জেনে নিই এ জেলার ৬টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে-
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি
কুমারখালীর শিলাইদহে অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির কথা কে না শুনেছে? কুষ্টিয়া জেলার অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা এটি। বিশেষ করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রানাথের জন্মদিন উপলক্ষে ২৫ বৈশাখ আয়োজিত রবীন্দ্র জয়ন্তীর উৎসবে দর্শনার্থীদের বেশি ভ্রমণ করতে দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের দীর্ঘ সময় এই কুঠিবাড়িতে অবস্থান করেছেন এবং বাবার জমিদারি দেখাশুনা করেছেন। জমিদারি দেখাশুনার ফাঁকে কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও উপন্যাসও রচনা করেছেন।
লালনের আখড়া
মরমী বাউল সাধক লালন ফকিরের আখড়া সংস্কৃতিপ্রেমী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় অবস্থিত এ আখড়ায় অসংখ্য বাউলের সান্নিধ্যে আসা যায়। বাংলা ক্যালেন্ডারের ফাল্গুন মাসে দোল পূর্ণিমা উৎসবে সবচেয়ে বেশি লোক জমায়েত হয় এখানে। এছাড়া ১৭ অক্টোবর লালনের জন্মোৎসবকে কেন্দ্র করে ‘লালন মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়।
ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ
মুঘল স্থাপত্যে নির্মিত ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ কুষ্টিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সমাদৃত। ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ইতিহাসপ্রেমীদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। কুষ্টিয়া শহর থেকে গণপরিবহনে মসজিদটির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগবে।
জুগিয়া তাঁতীপাড়া
কুষ্টিয়ার জুগিয়া গ্রামে অবস্থিত এই তাঁতীপাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আকর্ষণীয়। কুষ্টিয়া শহর থেকে রিকশাযোগে এক ঘণ্টায় তাঁতীপাড়ায় পৌঁছানো সম্ভব। তাঁতীপাড়ায় ভ্রমণ করলে তাঁতীদের জীবন সম্পর্কে জানা যাবে এবং বাংলাদেশের লোকজ তাঁত শিল্প সম্পর্কে জানা যাবে।
রবীন্দ্র সদন
কুষ্টিয়ার মিলপাড়ায় অবস্থিত রবীন্দ্র সদন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানেও মাঝেমধ্যে অবস্থান করতেন। শিলাইদহ থেকে ১০ মিনিটের পথ এটি। কুষ্টিয়া শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক স্থাপনা এটি। বর্তমানে এটি মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতিহাস ও সাহিত্যপ্রেমী এবং সংস্কৃতিবান মানুষ এখানে বেশি ভ্রমণ করেন।
গড়াই নদী
কুষ্টিয়া শহর প্রধানত গড়াই নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। স্থানীয়রা একে মধুমতি নামে চেনেন। সূর্যাস্তের সময়ে দর্শনার্থীরা এখানে ভ্রমণ করেন। বিশেষ করে গরমের সময়ে এখানে সব বয়সের দর্শনার্থীদের আসতে দেখা যায়। মনোমুগ্ধকর ও ভুবনমোহিনী প্রাকৃতিক দৃশ্য চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য উত্তম।
যেভাবে যাবেন কুষ্টিয়ায়
ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় বাসযোগে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এসবি সুপার ডিলাক্স, শ্যামলী পরিবহনসহ আরও অনেক বাসে ভ্রমণ করা সম্ভব। গভীর রাতে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে যাতায়াত করা যায়। রাজধানী ঢাকার গাবতলী বা কল্যাণপুর থেকে এসব বাস ছাড়ে। ভ্রমণের কয়েক দিন আগে বাসের টিকেট বুকিং করা ভালো।
কোথায় থাকবেন
কুষ্টিয়া শহরে রাতে থাকার জন্য উন্নত মানের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে দাম একটু বেশি হলেও খাবারের মান ভালো। একসঙ্গে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রয়েছে। ফলে যেকোন এসে নিশ্চিন্তে এসব হোটেলে থাকতে পারবেন।
কী খাবেন-
কুষ্টিয়া শহরে বিদ্যমান রেস্তোরাঁগুলোতে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। বিশেষ করে সকালের নাশতা হিসেবে হাতে তৈরি রুটি ও ভাজি বা ডাল অনেক সুস্বাদু। বাস স্টপেজের কাছেও অনেক দোকান রয়েছে এবং সেখান থেকে সকালের নাশতা বা বিকেলের স্ন্যাক্স পাওয়া যায়।
এইচএকে/আরআর/এএ