লঞ্চঘাটে পাঠাগার, সময় কাটাতে তরুণদের প্রশংসনীয় উদ্যোগ
লঞ্চ কিংবা ট্রলারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় যখন একঘেয়েমি চেপে ধরছিল, তখনই বইয়ের পাতায় চোখ রেখে হারিয়ে গেলেন পৃথিবীর ফুসফুস অ্যামাজন জঙ্গলে। কিংবা গল্পের চরিত্রের সঙ্গে দোল খেতে খেতে যদি লঞ্চ বা ট্রলারের দেখা পেয়ে যান, তাতে মন্দ কি? বলছিলাম, লঞ্চঘাটে পাঠাগারের কথা। লঞ্চঘাটে সুন্দরবন দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করতে এমনি এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে হিউম্যানিটি ফার্স্ট নামের একটি সামাজিক সংগঠন।
উদ্যোক্তারা যার নাম দিয়েছেন, লঞ্চঘাটে পাঠাগার। যেখানে পাঠকদের জন্য বই পড়ার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। দাঁড়িয়ে নয়, বসে বসে বই পড়ার আনন্দ ছড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সামাজিক সংগঠনটি। খুলনার কয়রা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবন সংলগ্ন কাটকাটা এলাকার লঞ্চঘাটে এলেই মিলবে তরুণদের এ পাঠাগারের দেখা।
উদ্যোগের কথা জানতে চাইলে হিউম্যানিটি ফার্স্টের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রভাষক ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা বেশি বেশি পাঠাগার তৈরি করতে চাই। মানুষকে বইয়ের মধ্যে ডোবাতে চাই। মূলত, মানুষের বিরক্তিকর সময়টাকে কিভাবে বইয়ের মাধ্যমে উপভোগ্য করা যায়, সে চিন্তা থেকেই লঞ্চঘাটে এ পাঠাগার। সাধারণত জেলা গ্রন্থাগার বা বড় কোন লাইব্রেরিতে প্রচুর বই থাকলেও মানুষ সেখানে পড়তে যায় না। কারণ, তার সময় নাই। সেক্ষেত্রে মানুষের বিরক্তিকর সময়টাতে যদি হাতের কাছে বই মেলে, তাহলে মানুষ বই পড়বে, বইয়ের আনন্দটা উপভোগ করবে।
সামনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, আমরা হাসপাতালেও পাঠাগার করবো। এখানে অনেকেই আসেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডাক্তারের জন্য বসে থাকেন। এই বিরক্তিকর সময়টাতে যদি বন্ধু হিসেবে বই হয়, তাহলে মন্দ নয়। অনেক সময় দেখা যায়, বয়স্কদের সাথে শিশুরাও আসেন। এখন তাদেরও সময় কাটে না। যদি তাদের বয়সের বই সেখানে রাখা যায়, তারা পড়লো। আনন্দ পেল, ভালো সময়ও কাটালো।
খুলনা গামী যাত্রী সাজিদুল ইসলাম বলেন, 'লঞ্চঘাটে পাঠাগার' প্রথম দেখলাম! দেখেই অবাক! সাধারণত লঞ্চে খুলনা যাওয়ার জন্য আসা। এসেই দেখি অনেকে বই পড়ছেন। তখন আমিও অবসর সময়টা কাটানোর জন্য গল্পের বই হাতে নিলাম। কারণ অপেক্ষা বিরক্তিকর একটি বিষয়। তবে হাতে বই থাকায়, সময়টা ভালোই কাটছে।
বেদকাশী বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিকেল বেলা লঞ্চ ঘাটে এসে আড্ডা দেয়। নদীর বিপরীতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করে। বাড়িতে বই থাকলেও পড়া হয়ে ওঠেনা। কিন্তু যখন নীরব নিস্তব্ধ একটা জায়গায় এসে সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি হাতের নাগালে পছন্দের বই পাওয়া যায় তাহলে তো কথায় নেই।