সত্যজিৎ রায়

;

সত্যজিৎ রায় একাধারে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক এবং লেখক। তাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়।

;

সত্যজিৎ কর্মজীবন শুরু করেন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে। এরপর কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র ‘লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে’ দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। 

;

সত্যজিৎ রায়ের প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে। এটি ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এরমধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব প্রামাণ্যচিত্র’ পুরস্কার। ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’ (১৯৫৬) ও ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯) একত্রে ‘অপু ত্রয়ী’ নামে পরিচিত।

;

সত্যজিৎ রায় ক্যারিয়ারে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার), যা তিনি সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন। এছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১টি গোল্ডেন লায়ন, ২টি রৌপ্য ভল্লুক।

;

১৯২১ সালে কলকাতায় জন্ম নেন সুকুমারের একমাত্র সন্তান সত্যজিৎ রায়। সত্যজিতের মাত্র তিন বছর বয়সেই বাবা সুকুমারের মৃত্যু ঘটে; মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাকে বড় করেন। তার পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কিশোরগঞ্জে (বর্তমানে বাংলাদেশ) কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে।

;

সত্যজিৎ রায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। নিয়মানুযায়ী বিশ্বভারতীতে সত্যজিতের পাঁচ বছর পড়াশোনা করার কথা থাকলেও তার আগেই ১৯৪৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে ‘জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার’ হিসেবে যোগ দেন।

;

১৯৪৯ সালে সত্যজিৎ তার দূরসম্পর্কের বোন ও বহুদিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির ঘরে ছেলে সন্দীপ রায়ের জন্ম হয়। যিনি নিজেও বর্তমানে একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক।

;

১৯৬২ সালে সত্যজিৎ ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ পরিচালনা করেন। এটি ছিল তার নির্মিত প্রথম মৌলিক চিত্রনাট্যনির্ভর রঙিন সিনেমা। দার্জিলিং নামের এক পাহাড়ী রিসোর্টে একটি উচ্চবিত্ত পরিবারের কাটানো এক বিকেলের কাহিনি নিয়ে এই জটিল ও সঙ্গীতনির্ভর সিনেমাটি নির্মাণ হয়, যে বিকেলে পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ করেই পরিবারের দণ্ডমুণ্ড কর্তা ইন্দ্রনাথ রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

;

সত্যজিৎ বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি চরিত্রের স্রষ্টা। একটি হল প্রাতিজনিক গোয়েন্দা ‘ফেলুদা’, অন্যটি ‘বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কু’। এছাড়া তিনি প্রচুর ছোটগল্প লিখেছেন যেগুলো বারটির সংকলনে প্রকাশ পেত এবং সংকলনগুলোর শিরোনামে ‘বার’ বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হত। যেমন ‘একের পিঠে দুই’, ‘এক ডজন গপ্পো’।

;