ক্ষতি কমাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও ক্রপ মডেলিং গবেষণার গুরুত্ব
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ও মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভিলক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে স্থিতিশীল কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতাকে দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। যার সুফল হচ্ছে- বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও কৃষির উন্নয়ন দেশের সাফল্যে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
কিন্তু কৃষির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ও আবাদি জমি হ্রাসের পাশাপাশি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ুর পরিবর্তন। যা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই কৃষিক্ষেত্রে এই ক্রমবর্ধমান চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর প্রভাব হ্রাস করে জলবায়ু স্থিতিশীল কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন এবং কৃষক পর্যায়ে তা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
এ কারণে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। যেমন- বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এ দীর্ঘমেয়াদি পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিবেশগত টেকসই নিশ্চিত করা এবং কার্যকরভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করা এবং শক্তিশালী, অভিযোজিত এবং সমন্বিত কৌশলের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য ডেল্টা চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদনশীলতা এবং উৎপাদন বাড়ায় এমন স্থিতিস্থাপক কৃষি অনুশীলনগুলো বাস্তবায়ন করা, যা বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে। এসডিজিতে জলবায়ু পরিবর্তন, চরম আবহাওয়া, খরা, বন্যা এবং অন্যান্য দুর্যোগের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে।
তাছাড়া জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি, ২০২০-এ উপযুক্ত প্রযুক্তি এবং শস্য উৎপাদন জ্ঞান ব্যবহার করে, নতুন তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি-জলবায়ু পূর্বাভাসের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ডেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ করে প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থা উন্নত করা যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি কমাতে সহায়ক হবে। এবং জাতীয় কৃষি নীতিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ২০১৬ সালে মানসম্মত আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং ক্রপ মডেলিং গবেষণার মাধ্যমে ধানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য একটি সফল এবং টেকসই কৃষি আবহাওয়া ও ক্রপ মডেলিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে। এ ল্যাবরেটরিটি বহুমুখী গবেষকদের একটি দল নিয়ে গঠিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জলবায়ু স্থিতিশীল ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে ধান ফসল-আবহাওয়ার সম্পর্ক এবং ধান ফসলের পোকা-মাকড় ও রোগের সঙ্গে আবহাওয়ার সংবেদনশীলতা নিয়ে গবেষণা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা এবং কৃষকদের দুর্যোগ ক্ষতি প্রশমনের জন্য মাঠ পর্যায়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়। যাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং ক্রপ মডেলিং গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল প্রয়োগের মাধ্যমে ধানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
ব্রিতে প্রতিষ্ঠিত এগ্রোমেট এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাবের উদ্দেশ্য হচ্ছে- কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা। বিশেষ করে, আবহাওয়ার সঙ্গে ধানের রোগ-বালাইয়ের বিস্তারের ধরন, তা প্রশমন ও ব্যবস্থাপনা, ভূস্থানিক প্রযুক্তি এবং কৃষিতে তাদের ব্যবহার এবং টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষকদেরকে স্থানীয় জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্যের যোগান দেওয়া। ফসল এবং এলাকার ভিত্তিতে কৃষকদের নিয়মিত কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত প্রাথমিক সতর্কতা ও পরামর্শ দেওয়া। দক্ষ খামার ব্যবস্থাপনার জন্য গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের কাছে আবহাওয়া ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ প্রচার করা। জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা, জলবায়ু এবং কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা সংক্রান্ত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আবহাওয়া ভিত্তিক অভিযোজন কৌশল শেখানো। সর্বপরি বাংলাদেশে জলবায়ু স্থিতিশীল টেকসই ধান চাষ পদ্ধতি চালু করা।
সম্প্রতি ইউএসএআইডি এর আর্থিক সহযোগীতায় ‘Partnerships for Enhanced Engagement in Research (PEER)” প্রোগ্রামের আওতায় ব্রির এগ্রোমেট এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাব কর্তৃক পরিচালিত ‘ইন্টিগ্রেটেড রাইস অ্যাডভাইজরি সিস্টেমস ফর সাসটেইনবল প্রডাকটিভিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির কৃষি আবহাওয়া এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক এবং প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান। তিনি জানান, ‘ইন্টিগ্রেটেড রাইস অ্যাডভাইজরি সিস্টেমস’ হচ্ছে একটি ওয়েব-বেসড ডিসিশান সাপোর্ট সিস্টেম যার মাধ্যমে ধানের বিভিন্ন বৃদ্ধির পর্যায়ে আবহাওয়ার পূর্ভাবাসকে আমলে নিয়ে অঞ্চল-ভিত্তিক ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পরামর্শ তৈরি ও পরিষেবা দেওয়ার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্লাটফর্মটি তৈরির ভিত্তি হচ্ছে আমাদের বিভিন্ন ন্যাশনাল পলিসি। যেমন- ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, এসডিজি ২০৩০, জাতীয় কৃষি নীতি এবং জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি। আমরা অবগত যে, বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে কি? আমরা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) থেকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর ধরণ ও মাত্রা স্থানিকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর এ পরিবর্তিত অবস্থায় টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আবহাওয়া ও জলবায়ু স্থিতিশীল ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে ধান ফসল-আবহাওয়ার সম্পর্ক এবং ধান ফসলের পোকা-মাকড় ও রোগের সঙ্গে আবহাওয়ার সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে কৃষকদেরকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভিত্তিক ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সেবা দেওয়া প্রয়োজন। আর এ বিষয়টিকে বাস্তবে রুপায়িত করার জন্যই আমাদের এ প্রকল্প।
তিনি আরও যোগ করেন যে, গবেষণায় আরও দেখা গেছে, আবহাওয়া পূর্বাভাস ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শস্যের ফলন ৭-১০% বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫% হ্রাস এবং মোট আয় ৩১-৩৬% বৃদ্ধি করা সম্ভব। ব্রি’র এগ্রোমেট গবেষকদের দাবি পূর্বাভাস ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ করলে, ধানের ফলন কমপক্ষে ৭% বৃদ্ধি পাবে, যা জাতীয় খাদ্য ঝুড়িতে ০.১৭ মিলিয়ন টন ধান যোগ করবে। যদি আবহাওয়া পূর্বাভাস ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা পুরো ধান উৎপাদন ব্যবস্থায় সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এক্ষেত্রে এক টাকা বিনিয়োগে ৫১-৭৩ টাকা আয় হবে। অতএব এই আইআরএএস (IRAS) সিস্টেম যদি আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি এবং এর মাধ্যমে যে অ্যাডভাইজরি তৈরি হবে সেটা যদি ডিএই এর মাধ্যমে কৃষকদের কাছে ঠিকমত পৌঁছে এবং কৃষকরাও যদি সে অনুসারে তাদের ধান ফসল ব্যবস্থাপনা করে তাহলে ফলন ও সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি করবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলা রঞ্জন দাস বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা কৃষকদের ফলনের ক্ষতি প্রশমন করবে। পূর্বাভাসের মাধ্যমে দুর্যোগ সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারলে কৃষকদের ক্ষতি কমিয়ে টেকসই উৎপাদন বজায় রাখা সম্ভব হবে। পূর্বাভাসের ডেটা প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন এবং যাচাই করা এবং কৃষকদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভিত্তিক ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও পরামর্শ সেবা দেওয়া এবং প্রচারের জন্য একটি ওয়েব-ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় প্ল্যাটফর্ম 'ইন্টিগ্রেটেড রাইস অ্যাডভাইজরি সিস্টেম (IRAS)'। যেটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পারস্পরিক সফল সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। এই প্ল্যাটফর্মটি অবস্থান-নির্দিষ্ট আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সঙ্গে সঙ্গে সেই সব বিভিন্ন অবস্থানের জন্য ধানের বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষকদের ইনপুটের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভিত্তিক ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সাপ্তাহিক বুলেটিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করছে এবং সেই বুলেটিনটি এক্সটেনশন অফিসিয়ালদের কাছে ই-মেলের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রচার করছে।
ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ধানের ৬০ ভাগ ফলন নির্ভর করে সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর। ব্রি এগ্রোমেট ল্যাব কর্তৃক তৈরি IRAS প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। আমরা চাই, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত পরামর্শমূলক পরিষেবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে যাক। এই পরিষেবা ও পরামর্শ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে তারা উপকৃত হবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ধানের ফলন ও সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া পূর্বাভাস ভিত্তিক পরামর্শ সেবা কৃষকদের জন্য খুবই কার্যকর একটি প্রযুক্তি। এটি শুধুমাত্র আবহাওয়ার পূর্বাভাসের তথ্য দেয় না বরং সময়মতো রোপণ এবং সেচ, সার, পানি, কীটনাশক প্রয়োগসহ ধান চাষের প্রযুক্তিগত দিকনির্দেশনা দেয়। এটি সেচের পানি, শ্রমশক্তি এবং জ্বালানির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদও সংরক্ষণ করে। ব্রির কৃষি আবহাওয়া এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাবরেটরি ২০৩০ সালের মধ্যে ৫% কৃষককে ওই প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যার ফলে দেশে অতিরিক্ত ০.২১৪ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদন হবে বলে আমরা আশাবাদী।
ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে- কৃষি-আবহাওয়া পূর্বাভাসের মাধ্যমে প্রণীত পরামর্শ সেবাগুলো ব্যবহারকারীদের (কৃষক ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা) কাছে সর্বোত্তম এবং কার্যকর উপায়ে পৌঁছানোর জন্য এই সিস্টেমে ভয়েস এসএমএস সংযুক্তকরণ। ওয়েব এপ্লিকেশন সিস্টেমকে সফল করার জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা এবং সেজন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ যোগসূত্র/প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষকদের মধ্যে সংযোগ আরো শক্তিশালী করা। যেহেতু কৃষকরা এই প্রযুক্তির প্রকৃত ব্যবহারকারী, কাজেই তাদেরকে আবহাওয়া পূর্বাভাস ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা পদ্ধতিতে ভালভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা। ধানের ফলন থেকে উৎপাদনশীলতা এবং মুনাফা বৃদ্ধির জন্য এর মাধ্যমে দেশব্যাপী সমন্বিত উপায়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস-ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা বিস্তৃত প্রদর্শন, পরিমার্জন, এবং প্রচারের জন্য একটি ব্যাপক এবং দক্ষ কর্মসূচি গ্রহণ করা। মাঠ পর্যায়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস-ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা এর যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে দ্রুত এবং পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত করা। আবহাওয়ার পূর্বাভাস-ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রণয়নে নীতি নির্ধারকদের সহায়তা নেওয়া।
লেখক: ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর এবং পিএইচডি ফেলো, কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ, শেকৃবি, ঢাকা।
ক্ষতি কমাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও ক্রপ মডেলিং গবেষণার গুরুত্ব
কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ও মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভিলক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে স্থিতিশীল কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতাকে দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। যার সুফল হচ্ছে- বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও কৃষির উন্নয়ন দেশের সাফল্যে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
কিন্তু কৃষির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ও আবাদি জমি হ্রাসের পাশাপাশি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ুর পরিবর্তন। যা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই কৃষিক্ষেত্রে এই ক্রমবর্ধমান চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর প্রভাব হ্রাস করে জলবায়ু স্থিতিশীল কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন এবং কৃষক পর্যায়ে তা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
এ কারণে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। যেমন- বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এ দীর্ঘমেয়াদি পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিবেশগত টেকসই নিশ্চিত করা এবং কার্যকরভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করা এবং শক্তিশালী, অভিযোজিত এবং সমন্বিত কৌশলের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য ডেল্টা চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদনশীলতা এবং উৎপাদন বাড়ায় এমন স্থিতিস্থাপক কৃষি অনুশীলনগুলো বাস্তবায়ন করা, যা বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে। এসডিজিতে জলবায়ু পরিবর্তন, চরম আবহাওয়া, খরা, বন্যা এবং অন্যান্য দুর্যোগের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে।
তাছাড়া জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি, ২০২০-এ উপযুক্ত প্রযুক্তি এবং শস্য উৎপাদন জ্ঞান ব্যবহার করে, নতুন তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি-জলবায়ু পূর্বাভাসের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ডেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ করে প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থা উন্নত করা যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি কমাতে সহায়ক হবে। এবং জাতীয় কৃষি নীতিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ২০১৬ সালে মানসম্মত আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং ক্রপ মডেলিং গবেষণার মাধ্যমে ধানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য একটি সফল এবং টেকসই কৃষি আবহাওয়া ও ক্রপ মডেলিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে। এ ল্যাবরেটরিটি বহুমুখী গবেষকদের একটি দল নিয়ে গঠিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জলবায়ু স্থিতিশীল ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে ধান ফসল-আবহাওয়ার সম্পর্ক এবং ধান ফসলের পোকা-মাকড় ও রোগের সঙ্গে আবহাওয়ার সংবেদনশীলতা নিয়ে গবেষণা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা এবং কৃষকদের দুর্যোগ ক্ষতি প্রশমনের জন্য মাঠ পর্যায়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়। যাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং ক্রপ মডেলিং গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল প্রয়োগের মাধ্যমে ধানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
ব্রিতে প্রতিষ্ঠিত এগ্রোমেট এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাবের উদ্দেশ্য হচ্ছে- কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা। বিশেষ করে, আবহাওয়ার সঙ্গে ধানের রোগ-বালাইয়ের বিস্তারের ধরন, তা প্রশমন ও ব্যবস্থাপনা, ভূস্থানিক প্রযুক্তি এবং কৃষিতে তাদের ব্যবহার এবং টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষকদেরকে স্থানীয় জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্যের যোগান দেওয়া। ফসল এবং এলাকার ভিত্তিতে কৃষকদের নিয়মিত কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত প্রাথমিক সতর্কতা ও পরামর্শ দেওয়া। দক্ষ খামার ব্যবস্থাপনার জন্য গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের কাছে আবহাওয়া ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ প্রচার করা। জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা, জলবায়ু এবং কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা সংক্রান্ত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আবহাওয়া ভিত্তিক অভিযোজন কৌশল শেখানো। সর্বপরি বাংলাদেশে জলবায়ু স্থিতিশীল টেকসই ধান চাষ পদ্ধতি চালু করা।
সম্প্রতি ইউএসএআইডি এর আর্থিক সহযোগীতায় ‘Partnerships for Enhanced Engagement in Research (PEER)” প্রোগ্রামের আওতায় ব্রির এগ্রোমেট এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাব কর্তৃক পরিচালিত ‘ইন্টিগ্রেটেড রাইস অ্যাডভাইজরি সিস্টেমস ফর সাসটেইনবল প্রডাকটিভিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির কৃষি আবহাওয়া এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক এবং প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান। তিনি জানান, ‘ইন্টিগ্রেটেড রাইস অ্যাডভাইজরি সিস্টেমস’ হচ্ছে একটি ওয়েব-বেসড ডিসিশান সাপোর্ট সিস্টেম যার মাধ্যমে ধানের বিভিন্ন বৃদ্ধির পর্যায়ে আবহাওয়ার পূর্ভাবাসকে আমলে নিয়ে অঞ্চল-ভিত্তিক ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পরামর্শ তৈরি ও পরিষেবা দেওয়ার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্লাটফর্মটি তৈরির ভিত্তি হচ্ছে আমাদের বিভিন্ন ন্যাশনাল পলিসি। যেমন- ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, এসডিজি ২০৩০, জাতীয় কৃষি নীতি এবং জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি। আমরা অবগত যে, বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে কি? আমরা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) থেকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর ধরণ ও মাত্রা স্থানিকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর এ পরিবর্তিত অবস্থায় টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আবহাওয়া ও জলবায়ু স্থিতিশীল ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে ধান ফসল-আবহাওয়ার সম্পর্ক এবং ধান ফসলের পোকা-মাকড় ও রোগের সঙ্গে আবহাওয়ার সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে কৃষকদেরকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভিত্তিক ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সেবা দেওয়া প্রয়োজন। আর এ বিষয়টিকে বাস্তবে রুপায়িত করার জন্যই আমাদের এ প্রকল্প।
তিনি আরও যোগ করেন যে, গবেষণায় আরও দেখা গেছে, আবহাওয়া পূর্বাভাস ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শস্যের ফলন ৭-১০% বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫% হ্রাস এবং মোট আয় ৩১-৩৬% বৃদ্ধি করা সম্ভব। ব্রি’র এগ্রোমেট গবেষকদের দাবি পূর্বাভাস ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ করলে, ধানের ফলন কমপক্ষে ৭% বৃদ্ধি পাবে, যা জাতীয় খাদ্য ঝুড়িতে ০.১৭ মিলিয়ন টন ধান যোগ করবে। যদি আবহাওয়া পূর্বাভাস ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা পুরো ধান উৎপাদন ব্যবস্থায় সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এক্ষেত্রে এক টাকা বিনিয়োগে ৫১-৭৩ টাকা আয় হবে। অতএব এই আইআরএএস (IRAS) সিস্টেম যদি আমরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি এবং এর মাধ্যমে যে অ্যাডভাইজরি তৈরি হবে সেটা যদি ডিএই এর মাধ্যমে কৃষকদের কাছে ঠিকমত পৌঁছে এবং কৃষকরাও যদি সে অনুসারে তাদের ধান ফসল ব্যবস্থাপনা করে তাহলে ফলন ও সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি করবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলা রঞ্জন দাস বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা কৃষকদের ফলনের ক্ষতি প্রশমন করবে। পূর্বাভাসের মাধ্যমে দুর্যোগ সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারলে কৃষকদের ক্ষতি কমিয়ে টেকসই উৎপাদন বজায় রাখা সম্ভব হবে। পূর্বাভাসের ডেটা প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন এবং যাচাই করা এবং কৃষকদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভিত্তিক ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও পরামর্শ সেবা দেওয়া এবং প্রচারের জন্য একটি ওয়েব-ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় প্ল্যাটফর্ম 'ইন্টিগ্রেটেড রাইস অ্যাডভাইজরি সিস্টেম (IRAS)'। যেটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পারস্পরিক সফল সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। এই প্ল্যাটফর্মটি অবস্থান-নির্দিষ্ট আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সঙ্গে সঙ্গে সেই সব বিভিন্ন অবস্থানের জন্য ধানের বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষকদের ইনপুটের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভিত্তিক ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সাপ্তাহিক বুলেটিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করছে এবং সেই বুলেটিনটি এক্সটেনশন অফিসিয়ালদের কাছে ই-মেলের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রচার করছে।
ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ধানের ৬০ ভাগ ফলন নির্ভর করে সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর। ব্রি এগ্রোমেট ল্যাব কর্তৃক তৈরি IRAS প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। আমরা চাই, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত পরামর্শমূলক পরিষেবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে যাক। এই পরিষেবা ও পরামর্শ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে তারা উপকৃত হবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ধানের ফলন ও সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া পূর্বাভাস ভিত্তিক পরামর্শ সেবা কৃষকদের জন্য খুবই কার্যকর একটি প্রযুক্তি। এটি শুধুমাত্র আবহাওয়ার পূর্বাভাসের তথ্য দেয় না বরং সময়মতো রোপণ এবং সেচ, সার, পানি, কীটনাশক প্রয়োগসহ ধান চাষের প্রযুক্তিগত দিকনির্দেশনা দেয়। এটি সেচের পানি, শ্রমশক্তি এবং জ্বালানির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদও সংরক্ষণ করে। ব্রির কৃষি আবহাওয়া এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাবরেটরি ২০৩০ সালের মধ্যে ৫% কৃষককে ওই প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যার ফলে দেশে অতিরিক্ত ০.২১৪ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদন হবে বলে আমরা আশাবাদী।
ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে- কৃষি-আবহাওয়া পূর্বাভাসের মাধ্যমে প্রণীত পরামর্শ সেবাগুলো ব্যবহারকারীদের (কৃষক ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা) কাছে সর্বোত্তম এবং কার্যকর উপায়ে পৌঁছানোর জন্য এই সিস্টেমে ভয়েস এসএমএস সংযুক্তকরণ। ওয়েব এপ্লিকেশন সিস্টেমকে সফল করার জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা এবং সেজন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ যোগসূত্র/প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষকদের মধ্যে সংযোগ আরো শক্তিশালী করা। যেহেতু কৃষকরা এই প্রযুক্তির প্রকৃত ব্যবহারকারী, কাজেই তাদেরকে আবহাওয়া পূর্বাভাস ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা পদ্ধতিতে ভালভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা। ধানের ফলন থেকে উৎপাদনশীলতা এবং মুনাফা বৃদ্ধির জন্য এর মাধ্যমে দেশব্যাপী সমন্বিত উপায়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস-ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা বিস্তৃত প্রদর্শন, পরিমার্জন, এবং প্রচারের জন্য একটি ব্যাপক এবং দক্ষ কর্মসূচি গ্রহণ করা। মাঠ পর্যায়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস-ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা এর যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে দ্রুত এবং পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত করা। আবহাওয়ার পূর্বাভাস-ভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রণয়নে নীতি নির্ধারকদের সহায়তা নেওয়া।
লেখক: ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর এবং পিএইচডি ফেলো, কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ, শেকৃবি, ঢাকা।