শিক্ষক থেকে সফল কৃষি উদ্যোক্তা, মাসে আয় লাখ টাকা

শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চর জব্বর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জামশেদুর রহমান কিসলু। ৩১ বছরের শিক্ষকতা জীবনের পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম, দূরদর্শী পরিকল্পনা ও নিষ্ঠা দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি সমন্বিত কৃষি খামার যা থেকে বর্তমানে তিনি মাসে লাখ টাকারও বেশি আয় করছেন।
১৯৯৪ সালে চর জব্বর কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন কিসলু। চাকরির পাশাপাশি ব্যাচ পড়ানোর উপার্জন জমিয়ে ২০০৫ সালে চরজুবলি ইউনিয়নে ৩ একর পতিত জমি ৫ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। পরে সরকারি সহযোগিতা ও কৃষি ঋণের সহায়তায় ২০১৪ সালে ৫ একর ২৫ শতক জমিতে শুরু করেন সমন্বিত কৃষি খামার। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে খামারের পরিধি বাড়িয়ে বর্তমানে ৮ একর জমিতে তার কৃষিকাজ পরিচালিত হচ্ছে। খামারে রয়েছে সবজি, ফলমূল, হাঁস-মুরগি, ছাগল, গরু, মাছসহ নানামুখী কৃষিপণ্য। উৎপাদন, বিক্রি ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ সব মিলিয়ে খামারটি এখন সুবর্ণচরাঞ্চলের এক অনন্য উদাহরণ।
শিক্ষক ও কৃষি উদ্যোক্তা জামশেদুর রহমান কিসলু বলেন, শুরুতে জমিগুলো পুরোপুরি পতিত ছিল। কোথাও ধান হতো, কোথাও আবার অনাবাদি পড়ে থাকত। ব্যাচ পড়িয়ে যে কষ্টার্জিত টাকা পেতাম, তা দিয়েই ধীরে ধীরে এই খামার গড়ে তুলেছি। এখন এখানে হাঁস, মুরগি, ছাগল, গরু, মাছ, ফলমূল ও সবজি সবই উৎপাদন করি। মাসে দুই লাখ টাকা আয় করা কঠিন কিছু নয়। আর নিজের উৎপাদিত ফল-সবজি খাওয়ার আনন্দটাই আলাদা।
স্থানীয় খামারি আব্দুর রহমান বলেন, জামশেদুর রহমান কিসলু স্যার শুধু একজন শিক্ষক নন তিনি আমাদের পথপ্রদর্শক। তার অনুপ্রেরণাতেই আমি খামার শুরু করেছি। আজ আমার লেয়ার ও দেশি মুরগির খামার সফলভাবে চলছে। তিনি না থাকলে উদ্যোক্তা হওয়ার সাহসই পেতাম না।
আরেক স্থানীয় কৃষক মো. দিদার হোসেন বাবলু বলেন, স্যারের সফলতা শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয় এটি পুরো এলাকার জন্য অনুপ্রেরণা। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন পরিশ্রম, সাহস ও পরিকল্পনা থাকলে শিক্ষকও হতে পারেন সফল উদ্যোক্তা। তার সাফল্য দেখে নতুন প্রজন্ম নতুন উদ্যমে কৃষিখাতে এগিয়ে আসছে।
মো. আবুল খায়ের নামের স্থানীয় প্রবীণ কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, পতিত জমিকে তিনি যেন সোনার খামারে রূপ দিয়েছেন। তার খামারে গেলে মনে হয় যেন জীবন্ত এক শিক্ষাঙ্গনে দাঁড়িয়ে আছি। এলাকার কৃষির প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়াতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তার সমন্বিত খামার সত্যিই অনুকরণীয়।
আমান উল্যাহ নামের স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিসলু স্যার আমাদের কাছে বড় রোল মডেল। তিনি প্রমাণ করেছেন ইচ্ছাশক্তি থাকলে শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রেও সফল হওয়া যায়। তার প্রভাবেই আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েরা এখন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
মো. বাবু নামের খামারের কর্মচারী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই খামারে কাজ করছি। স্যার আমাদের খুবই স্নেহ করেন। বর্তমানে খামারে ৭-৮ জন স্থায়ী কর্মচারী আছেন, পাশাপাশি আরও ৮-১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এখানে কাজ করে খুব ভালো লাগে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন শিক্ষক সরকারি সহযোগিতা ও আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে যে এত বড় সফলতা অর্জন করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার সমন্বিত খামার এখন পুরো এলাকার জন্য অনুকরণীয় মডেল। অনেকেই তার অনুপ্রেরণায় নতুন উদ্যোগ নিতে এগিয়ে আসছেন।
হাসিব আল আমিন/এআরবি