নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের উৎপাদন এবং মান নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, রপ্তানির জন্য চাষ করা মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের ট্রেসেবিলিটি সিস্টেম কার্যকরের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রায় দুই লাখ সাত হাজার চিংড়ি খামার এবং নয় হাজার ৬৫১টি বাণিজ্যিক মৎস্য খামারের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে এবং ই-ট্রেসেবিলিটি কার্যক্রম পাইলটিং করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের উৎপাদন এবং মান নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রজনন মৌসুমে সমুদ্রে ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধকরণ এবং জেলেদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান, জাটকা সংরক্ষণে নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকরণ এবং জেলেদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২.৯৯ লাখ টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৬৫ লাখ টনে। বর্তমানে দেশে চিংড়ি উৎপাদনের সকল স্তরে উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলন (Good Aquaculture Practice- GAP) এবং Hazard Analysis & Critical Control Point (HACCP) ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয়েছে।

প্রণীত ‘মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) আইন ২০২০’ এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক রপ্তানি বাজারের জন্য নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য চাষের দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে।

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যেখানে বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি।

প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয়ের খাতগুলো থেকে কর বাবদ তিন লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

জেইউ/এমএআর