ধানের থোড় দেখাচ্ছেন এক কৃষক

বোরো ধানসহ ছয়টি ফসলের জমির ওপর দিয়ে আচমকা বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে তিন লাখেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৩৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ফসল পুড়েছে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন।

এপ্রিলের ৪ ও ৫ তারিখে দেশের ৩৬ জেলায় ফসলের ক্ষেত এ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ছয় ফসলের মধ্যে রয়েছে বোরো ধান, ভুট্টা, কলা, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম ও সবজি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো ধানের।

মোট ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঝড়ের সঙ্গে গরম বাতাসে মোট আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৬৯ হাজার ৬২৬ হেক্টর। এর মধ্যে ১০ হাজার ৩০১ হেক্টর জমির ফসল গরম বাতাসে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এছাড়া আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর জমির ফসলের। আংশিক ক্ষতির পরিমাণ সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রূপান্তর করলে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ হাজার ২৮৯ হেক্টরে।

সব মিলিয়ে মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ২১ হাজার ২৯২ হেক্টর। এসব জমিতে মোট ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন। যা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় ৩৩৪ কোটি ৪৪ দশমিক ৭৬৯ লাখ টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১০ হাজার কৃষক।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ জেলার মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, নওগাঁ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, গাইবান্ধা, ঝিনাইদহ, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাগুরা, যশোর ও নাটোর।

গরম বাতাসে ফসলের ক্ষতির শিকার হওয়া বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে এত ব্যাপকভাবে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে গরম বাতাস অতীতে আর বয়ে যায়নি। ওই সময়টাতে দেশে তাপমাত্রাও ছিল অনেক বেশি। ফলে এমনটি হয়েছে।

তিনি জানান, যে কৃষকরা জানুয়ারির ১০ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে বোরো ধান রোপণ করেছেন, তাদের জমির ধানে ওই সময়ে থোর আসে। ধানে থোর ও ফুল আসার সময়টা খুবই কঠিন সময়। এ কঠিন সময়েই ঝড়ের গতিতে গরম বাতাস বয়ে যায়। এতে কৃষকের ধান চিটা হয়ে যায়। পরামর্শ হিসেবে আমরা বলি, এ সময়ে জমিতে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত বোরো ধান : হিটশকে (গরম বাতাস) বোরো ধানের আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৬৮ হাজার ১২৩ হেক্টর। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১০ হাজার ২৯৮ হেক্টর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমি ৫৭ হাজার ৮২৬ হেক্টর। আংশিক ক্ষতি মিলে সম্পূর্ণ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ হাজার ২৯২ হেক্টর। এতে মোট ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৯৫ হাজার ৯৩৪ মেট্রিক টন, যা টাকার অংকে ৩২ কোটি ৮৩৯ লাখ টাকা। আর কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৩ হাজার ৬২০।

ভুট্টায় ক্ষতি : ভুট্টায় হিটশকে আক্রান্ত ফসলের পরিমাণ ৯৬৯ হেক্টর। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ২৫৫ হেক্টর। এতে উৎপাদিত ভুট্টার ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন। টাকার অঙ্কে ৩৯৬ দশমিক ৩১৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা তিন হাজার ৪২৫।

সবজি : ৪৭ হেক্টর জমিতে আংশিকভাবে সবজির ক্ষতি হয়েছে। আংশিকের অংশ সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রূপান্তর করলে দাঁড়ায় এক হেক্টর জমিতে। আর ফসলের পরিমাণে ১৯ মেট্রিক টন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাকার অঙ্কে যার দাম ১ দশমিক আট লাখ টাকা। কৃষকের সংখ্যা ৩৭০।

চীনাবাদাম : হিটশকে ১৮ হেক্টর জমির আংশিক ক্ষতি হয়। আংশিক অংশকে সম্পূর্ণে রূপান্তর করলে এক হেক্টর জমিতে দাঁড়ায়। ফসলের পরিমাণ দুই মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য ৯৭ হাজার টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৮০।

সূর্যমুখী : চার হেক্টর জমি আংশিকভাবে ক্ষতি হয়। এতে দুই মেট্রিক টন ফসল পুড়ে যায়, যার বাজার মূল্য এক দশমিক ০৮০ লাখ টাকা। কৃষকের সংখ্যা ১৫০।

কলা :  ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আংশিক ক্ষতি হয়, যা সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রূপান্তর করলে দাঁড়ায় তিন হেক্টর জমি। টাকার অংকে মোট ক্ষতির পরিমাণ ২০৫ দশমিক ৩৮ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা দুই হাজার ২৫৫ জন।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি যেহেতু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আউশে প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করবো। ইতোমধ্যে আমাদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে।

একে/আরএইচ