গাছে গাছে ঝুলে আছে নানা প্রজাতির তরমুজ

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। প্রবাদ বাক্যটি একদম খেটে যায় সাংবাদিক হেলাল উদ্দিনের ক্ষেত্রে। তিনি পরিত্যক্ত ইটভাটার পোড়া মাটিতে গড়ে তুলেছেন সবুজের সমারোহ।

চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহাতলী গ্রামের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি দুর্লভ ও রসালো হরেক প্রজাতির বিদেশি অর্গানিক ফলের চাষাবাদ শুরু করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘ফ্রুটস ভ্যালি’। 

ফ্রুটস ভ্যালিতে রয়েছে- সাম্মাম, রকমেলন এবং মাস্কমেলনসহ তিন জাতের ব্যতিক্রমী তরমুজ। এছাড়া বিদেশি নানা জাতের আম, মালটা, ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকামসহ নানা প্রজাতির ফল।

হেলাল উদ্দিনের ভাতিজা জিয়াউর রহমান বলেন, স্থানটি একটি পরিত্যক্ত ইটভাটা ছিল। আড়াই একর জমিতে আমরা প্রাথমিকভাবে প্রজেক্টটি চালু করেছি। এখনও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত শুরু করেনি। মোটামুটি ফলের চাষাবাদ করে সফল। খুব তাড়াতাড়ি সাম্মাম, রকমেলন এবং মাস্কমেলন বাজারজাত করব।

ফ্রুটস ভ্যালি বাগানে ঘুরতে আসা মোরশেদ আলম নামে এক যুবক বলেন, শাহাতলী এলাকায় সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন যে ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। এটি হাজারো যুবককে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিবে। এখানে এলে যে কেউ ফলের বাগান গড়ে তোলার উৎসাহ পাবে।

হেলাল উদ্দিন বলেন, পরিত্যক্ত দুটি ইটভাটার আড়াই একর জমিতে মাটি বালি ফেলে ফল চাষ শুরু করেছি। বিদেশি এ সকল ফল চাষের জন্য আমি কোনো জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিইনি। ইন্টারন্যাশনাল ওয়েবসাইট  রিসার্চ করে ফলের চাষাবাদ সম্পর্কে জেনেছি। মূলত যে ফলের চাষ এদেশের মাটিতে করা যাবে, আমি সেগুলো প্রাথমিকভাবে শুরু করেছি। এটি বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিক ফলের চাষ। আমাদের মূল ফলটি আসতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, ফল চাষ করতে গিয়ে আমার ২৬ থেকে ২৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ ফল চাষ করে আমি মোটামুটি সফল। এখন আমি সাথী ফসল থেকে আয় করা শুরু করেছি। আমি আশাবাদী এই ফল চাষ করে দ্বিগুণ অর্থ উপার্জন করতে পারব।

হেলাল উদ্দিন আরও বলেন,বাগানে সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষমুক্ত, কীটনাশকমুক্ত অর্গানিক ফল চাষ করে পাইকারি মূল্যে সারাদেশের ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে পারলে আমরা সফল হব।

তিনি বিদেশি ফল চাষাবাদে আগ্রহী যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, অনেক যুবকের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও এত টাকা খরচ করে বিদেশি ফল চাষ করা সম্ভব হয় না। তবে আগ্রহী বেকার যুবকরা বিদেশে পাড়ি না জমিয়ে ওই টাকা দিয়ে স্বল্প জমিতে এ ধরনের বিদেশি ফল চাষাবাদ করতে পারে।দেশের কোথাও বিদেশি ফল চাষাবাদ করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় যুবকরা ইন্টারন্যাশনাল কৃষিভিত্তিক ওয়েবসাইট দেখে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এছাড়া আগ্রহীরা আমার কাছ থেকেও ফল চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। 

আমি মনে করি এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা খুব দরকার। বেকার যুবকদের যদি ঋণ, সার, বীজ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এ দেশের যুবকরা আর বেকার থাকবে না। একদিকে বেকারত্ব কমবে অন্যদিকে রফতানি করে দেশ লাভবান হবে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বপন মাহমুদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমরা কৃষকদের সকল ধরনের সহযোগিতা করে থাকি। কেউ যদি নিজ উদ্যোগে বিদেশি ফলের চাষ শুরু করে, আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব। এছাড়া সফল চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। 

চাঁদপুর সদরের কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, হেলাল উদ্দিন যেভাবে জৈব ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে বিদেশি ফল চাষ শুরু করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বিদেশি ফল চাষের জন্য আমাদের সব রকম সহযোগিতা থাকবে। একটু উদ্যোগ নিলে সারাদেশে এ রকম বিদেশি ফলের চাষ সম্ভব।

এসপি