ভারতীয় এসব গরু চোরাই পথে বাংলাদেশে আসে

এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রায় সাত লাখ খামারি গবাদি পশু প্রস্তুত করছেন। চাহিদার চেয়ে পশুর মজুত ১৫ লাখেরও বেশি। এরপরও সীমান্ত দিয়ে গরু প্রবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন খামারি ও সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সীমান্তের ওপার থেকে গরু প্রবেশ বন্ধ, পশু পরিবহনে চাঁদাবাজি ও হয়রানি মুক্ত রাখা-ই এখন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মূল চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা গেলেই খামারিরা সুফল পাবেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। কঠোর অবস্থানে রয়েছে মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

সীমান্ত দিয়ে গরু প্রবেশ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভুঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানির ঈদ এলেই সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে গরু প্রবেশ এবং কোরবানির পশুর গাড়িতে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ সামনে আসে। এ দুটি বিষয় একেবারে শূন্যের ঘরে নিয়ে আসার সময় হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ধরে দেশে পশুপালনে বড় ধরনের বিপ্লব হয়েছে। তরুণ খামারি থেকে শুরু করে অনেকেই এ খাতে পরিশ্রম ও বিনিয়োগ করে সুফল পাচ্ছেন। এ সময়ে যদি সীমান্তের গরু এবং পথের হয়রানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়, তাহলে তারা এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। এতে দেশের মাংস উৎপাদন খাত ক্ষতির মুখে পড়বে।

প্রাণীসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তের ওপার থেকে গরু প্রবেশ একাধিক বিষয়ের জন্যে ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্রথমত, আমদানি করা সেসব গবাদিপশুর সঙ্গে আসতে পারে নানা রোগ বালাই। দ্বিতীয়ত, খামারিরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবেন না। তৃতীয়ত, করোনার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিও অনেক বেশি বেড়ে যাবে। তাই এ ইস্যুকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করতে হবে।

সীমান্তে গরু আসা বন্ধে কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রাণিসম্পদ-২) ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সীমান্ত দিয়ে বৈধভাবে গরু আমদানি বন্ধ রয়েছে। অবৈধ পথে গরু আসা বন্ধে ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি। আমাদের কাজ চলমান।

তিনি বলেন, অবৈধ পথে যাতে ঈদুল আজহার সময়ে দেশের মধ্যে গরু প্রবেশ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে একাধিক কাজ সম্পাদন হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়ে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর এ বিষয়ে নির্দেশনা পৌঁছে গেছে। বিভিন্ন জেলায় কাজ শুরুও হয়েছে। পথে চাঁদাবাজির বিষয়েও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।

খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহীর সভাপতি গোলাম রাহিদ ববিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সীমান্ত দিয়ে গরু আসা বন্ধ করা এ সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা, সারা বছরের ফল এ সময়ে পাবেন খামারিরা। তাদের যেন মাথায় হাত না পড়ে, সে দিক বিবেচনায় এনে সরকারের কাজ করতে হবে। খামারিরা তাদের গরু-ছাগল বিক্রির নিশ্চয়তা চান।

দেশে অবৈধ পথে গরু আসার অন্যতম রুট হলো কক্সবাজার। এ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল ঢাকা পোস্টকে জানান, আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। দেশের খামারিদের পাশে থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সভাও করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদুল আজহার এক মাস আগ থেকে এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সামনে আরও একাধিক বৈঠকে আমরা এ বিষয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেব। সীমান্ত দিয়ে গরু আসা বন্ধের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার শাখা সূত্র জানায়, সারাদেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু প্রস্তুত হচ্ছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০। কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা ছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩। অবশ্য আগের বছরগুলোতে কোটিরও বেশি পশু জবাই হয়েছে।

সূত্র জানায়, কোরবানিযোগ্য এসব পশু প্রস্তুত করছেন দেশের ছয় লাখ ৯৮ হাজার ১১৫ জন খামারি। খামারির সংখ্যার দিকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে রংপুর বিভাগ। এ বিভাগে খামারির সংখ্যা দুই লাখ ২২ হাজার ৪১৮। পরের স্থানে রয়েছে রাজশাহী। এ বিভাগে খামারির সংখ্যা এক লাখ ২৭ হাজার ২৬১।

একে/আরএইচ