দীর্ঘ দিনের অপেক্ষা শেষে পরীক্ষামূলকভাবে বিমানের টরন্টো ফ্লাইট চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম দিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ ১৩০ জনের ধারণক্ষমতার ফ্লাইটে যাত্রা করবেন মাত্র ৩৬ জন যাত্রী। বাকীদের অধিকাংশই বিমান, সিভিল এভিয়েশন ও বিমান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।

সরকারি আদেশ অনুযায়ী, তাদের অধিকাংশই যাচ্ছেন জিএসএ (জেনারেল সেলস এজেন্ট) নিয়োগ ও অফিস ঠিক করতে। পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটি আসলে কোনো প্লেজার ট্রিপ (প্রমোদ ভ্রমণ) কি না কিংবা কর্মকর্তারা অকারণেই যাচ্ছেন কি না  সে প্রশ্ন উঠেছে। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ২৬ মার্চ থেকে ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তবে এরপরই তাকে প্রমোদ ভ্রমণের বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।

জবাবে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,  কানাডায় বিমানের অফিস ঠিক হয়েছে এক মাস আগে। জিএসএ ঠিক করতে অন্য আরেকটি টিম আগেই কানাডা গেছে। জিএসএ নিয়োগের কোনো বিষয়ে কাজ করতে এ ফ্লাইটের কেউ টরন্টো যাচ্ছেন না। আশা করি আপনারা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।

যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে কেন ফ্লাইট চালু করা হলো— এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতিই ছিল তবে কানাডা বলেছে যাত্রীদের বোর্ডিং ইন্টিগ্রেট করতে গেলে ১২ সপ্তাহ সময় লাগবে। তারপরও আমরা তাদের অনুরোধ করি, যাতে ২৬ মার্চ বিশেষ দিন তারা আমাদের এ অনুমতি দেয়। তারা আমাদের অনুমতি দিয়েছে।  জুনে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করব।

এ সময় পরীক্ষামূলক এ ফ্লাইটের ‘অতিরিক্ত খরচ’ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। প্রশ্নের উত্তরে বিমানের পরিচালক (করপোরেট প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং) মো. মাহবুব জাহান খান বলেন, এই পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে যারা যাচ্ছেন তাদের আসা-যাওয়া ও থাকার খরচ ৪ কোটি টাকার মতো। এতে ৩৬ জন সাধারণ যাত্রী যাচ্ছেন। টরন্টো থেকে ঢাকা ফেরার জন্য ১৯ জন যাত্রী টিকিট কিনেছে।

পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের গতিপথ ও ধারণক্ষমতা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে রাশিয়ায় যুদ্ধের কারণে ফ্লাইট অন্য দেশের উপর দিয়ে যাবে। ফলে অতিরিক্ত ২ ঘণ্টা বেশি সময় লাগবে। তেল বেশি লাগবে।  সেজন্য প্রাথমিকভাবে আমরা ঢাকা থেকে টরন্টো যাওয়ার সময় সর্বোচ্চ ১৩০ জনকে নিয়ে যাব। ফিরব ১২০ যাত্রী নিয়ে। রাশিয়ার আকাশপথ খুলে গেলে যাত্রীর ধারণক্ষমতা বাড়ানো হবে।

ফ্লাইট ঘোষণার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাই-কমিশনার ড. লিলি নিকোলস।

ফ্লাইট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কানাডার মতো একটি দেশে ফ্লাইট চালুর বিষয়টি অত্যন্ত প্রেস্টিজিয়াস। এছাড়াও প্রবাসীদের ভাইয়ের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল এ ফ্লাইট। আমি আশা করি, এ ফ্লাইটের মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে। আমি এই ফ্লাইটের সাফল্য কামনা করছি।

তিনি বলেন, আমরা ২/৩ বছর ধরে টরন্টো রুটে ফ্লাইট চালুর কার্যক্রম ও আনুষ্ঠানিকতা চালিয়ে যাচ্ছি। গৌরব ও অহংকারের মার্চ মাসে স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে আমরা ফ্লাইটটি উদ্বোধন করছি। ২৬ মার্চ রাতে টরেন্টোর উদ্দেশে কমার্শিয়াল পরীক্ষামূলক ফ্লাইট যাবে, জুন মাস থেকে নিয়মিত চলবে ফ্লাইট।

বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাই-কমিশনার ড. লিলি নিকোলস বলেন, ঢাকা থেকে কানাডাকে সংযুক্ত করার এই ফ্লাইটটি একটি ঐতিহাসিক ফ্লাইট। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে যে কয়টি দেশ প্রথমদিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তার মধ্যে কানাডা অন্যতম। আমি আশা করছি এ ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও মজবুত হবে।

উদ্বোধনী ফ্লাইটটি আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ১ টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের ফ্লাইট বিজি-৩০৫ কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে। ২৭ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে টরন্টোতে অবতরণ করবে। টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট বিজি-৩০৬ আগামী ২৯ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় ঢাকার উদ্দেশে  রওনা হবে এবং ৩০ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর সোয়া ১২ টায় ঢাকায় অবতরণ করবে।

বিমান জানায়, অত্যাধুনিক মডেলের বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে টরন্টো ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এ  উড়োজাহাজে আসনসংখ্যা ২৯৮।

বিমান জানায়, পরীক্ষামূলক এ ফ্লাইটে টরোন্টো যাবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুজন সংসদ সদস্য, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও মন্ত্রণালয়ের ৩৫ কর্মকর্তা ও ৩৬ জন সাধারণ যাত্রী।

ঢাকা-টরন্টো রুটে ভাড়া ধরা হয়েছে (ওয়ানওয়ে) ৭৫ হাজার ৮৩০ টাকা আর রিটার্নসহ ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ২০২০ সালে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের মার্চে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা হবে। বিমানে ঢাকা থেকে টরেন্টো রুটের ফ্লাইটটি প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আগ্রহ ও আবেগের।

যাত্রীদের কানাডার ভ্রমণ নির্দেশনা অনুসরণ করে ফ্লাইট ছাড়ার আগে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।

এআর/আরএইচ