বাংলাদেশের আকাশে ফ্লাইট উড়াতে চায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) এবং ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স। সম্প্রতি তারা বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (বেবিচক) সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। 

পিআইএ বেবিচককে জানায়, বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করলে বাংলাদেশের যাত্রীরা পাকিস্তান ট্রানজিট (করাচি) নিয়ে পার্শ্ববর্তী ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, ওমান, ইয়েমেন, উজবেকিস্তান, তুরস্কসহ আশপাশের দেশগুলোতে যেতে পারবে।

বেবিচকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এই দুইটি এয়ারলাইন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এয়ারলাইন্সগুলোকে স্ব স্ব দেশের কূটনীতিক মাধ্যমে (ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেল) যোগাযোগ করে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আবেদনের অনুরোধ করেছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, পিআইএ, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, গারুদা ইন্দোনেশিয়া এবং ইরাক এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছে। পিআইএ বেশ কয়েকবার ফ্লাইট চালানোর আগ্রহের কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাইকমিশনও জানিয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বাংলাদেশে ফ্লাইট চালাতে চায়। তবে তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্লাইটের বিস্তারিত জানিয়ে আবেদন করেনি। সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করলে বিভিন্ন মানদণ্ড পর্যবেক্ষণ করে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করেনি তবে বেবিচককে চিঠি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের স্ব স্ব দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেবিচকের কাছে আবেদন করতে বলেছি।

এদিকে এ বছরের মে মাসের শুরুর দিকে সর্বশেষ বিদেশী এয়ারলাইন্স হিসেবে সৌদি আরবের ফ্লাইনাসকে বাংলাদেশের আকাশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বেবিচক। তবে এবার তারা শুধুমাত্র হজযাত্রী বহনের অনুমতি চেয়েছে। ভবিষ্যতে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চাইলে সেটিও বিবেচনা করবে বেবিচক।

বেবিচকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকের মূল এজেন্ডা ছিল ফ্লাইট চালুর বিষয়টি। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তাই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ফ্লাইট চলাচল পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সে সময় আলোচনায় বেবিচক চেয়ারম্যান ফ্লাইট চালুর বিষয়ে ‘পর্যবেক্ষণ করা হবে’ বলে জবাব দিয়েছেন। দেশটি আবারও ফ্লাইট পরিচালনায় তাদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছে।

পিআইএ বর্তমানে ২০টি এয়ারক্রাফটের মাধ্যমে পাকিস্তান ও বিশ্বের ৬৬টি গন্তব্যে (কার্গোসহ) ফ্লাইট পরিচালনা করে। এরমধ্যে রয়েছে লাহোর, ইসলামাবাদ, সৌদি আরব, দুবাই, ম্যানচেস্টার ও লন্ডন।

এদিকে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সও (আগের নাম- ইথিউপিয়ান) বাংলাদেশ রুটে ফ্লাইট চালাতে চায়। এয়ারলাইন্সটি বর্তমানে ৭৭টি এয়ারক্রাফট দিয়ে ১০১ রুটে যাত্রীবাহী এবং ২৩টি রুটে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে। বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নিয়ে ইথিওপিয়া ট্রানজিট হয়ে ইয়েমেন, সৌদি আরব, সুদান, ইজিপট এবং ওমানে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ঢাকা পোস্ট। তবে একমাত্র ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ জানায়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল হওয়ার পর পরই বাংলাদেশে ফ্লাইট চালানো পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

২০২৩ সালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল তৈরির নির্মাণ কাজ শেষ হতে পারে। তৃতীয় টার্মিনালের পাশাপাশি ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) ও এক হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার সুবিধা, ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি-রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্স থাকবে। বহির্গমনে ৬৪ ও আগমনী যাত্রীদের জন্য ৬৪টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকছে। এছাড়া ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ ও ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে।

স্বাভাবিক সময়ে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে দৈনিক ১৩০টি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ২৫ থেকে ৩০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। বর্তমানে বিমানবন্দর বছরে ৮০ লাখ যাত্রী হ্যান্ডেল করতে সক্ষম। তবে তৃতীয় টার্মিনাল হলে বিমানবন্দরের এই সক্ষমতা বেড়ে বছরে দুই কোটিতে গিয়ে ঠেকবে।

এআর/আইএসএইচ