সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিয়ে চলা রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইটের টিকিটের দাম কমিয়েছে। টিকিটের দাম কমিয়ে বিমান অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসার ক্ষেত্র নষ্ট করছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)।

বিষয়টি অবগত করতে রোববার (১৯ জুন) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে চিঠি দিয়েছেন এওএবির মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান।

চিঠিতে বলা হয়, ১৯৯৬-২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের হাত ধরেই দেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো দাঁড়ানো শুরু করে। সেই সময় যাত্রীদের কোনো ধরনের সেবা না দিয়েই দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান বাংলাদেশ একচেটিয়া ফ্লাইট পরিচালনা করত। তখনকার মনোপলি মার্কেট বন্ধে প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেন। বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ অভ্যন্তরীণ যাত্রীই বহন করছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স, আর বিমান বহন করছে ২০ ভাগ।

বাংলাদেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের পথচলাটা মসৃণ নয়। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ইতোমধ্যে জিএমজি এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। মোটা দাগে এয়ারলাইন্সগুলো বন্ধের কারণ হিসেবে জেট ফুয়েলের অধিক মূল্যবৃদ্ধি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাজের চার্জগুলোকেই দায়ী করা হয়।

তবে গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ বরাবরই বাদ পড়ে যায়। সেটি হলো রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘লুণ্ঠনমূলক অপকৌশল’। বর্তমানে বিমান বিভিন্ন রুটের টিকেটের দাম কমিয়ে রাষ্ট্রীয় টাকায় ভর্তুকি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমানের এ অপকৌশল বাংলাদেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে দাঁড়াতে দেয়নি। দেশে মোট আটটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও বিমানের কারণে তারা অপারেশন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বিমানের অপকৌশলের কারণে বর্তমানে নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কোনোমতে টিকে আছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০০২-২০০৪ সাল পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া ছিল ২ হাজার ৮৫০ টাকা। জিএমজি এয়ারলাইন্সের ভাড়া ছিল ৪ হাজার টাকা। তবে বিমান তাদের ভাড়া কমিয়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা করে ফেলে। এক সময় যখন দুবাই রুটে জিএমজি এয়ারলাইন্স অধিকসংখ্যক যাত্রী বহন করত, তখন বিমান তাদের ভাড়া ৪৭৫ মার্কিন ডলার থেকে নামিয়ে ৩৫০ ডলার করে ফেলে। এর পরপরই জিএমজি তাদের অপারেশন বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

চিঠিতে এওএবি বলেছে, বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে প্রতি বছর এওসি (এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট) নবায়নের সময় বেবিচকের সব ধরনের চার্জ নগদে পরিশোধ করতে হয়। নগদ অর্থের বিনিময়ে কিনতে হয় তেল। অথচ বিমান বছরের পর বছর বেবিচকের বিভিন্ন চার্জ বাকি রেখে এবং পদ্মা অয়েলের কাছ থেকে বাকিতে জেট ফুয়েল কিনছে। এ দুই ক্ষেত্রেও বিমানের সঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর বৈষম্য করা হয়।

শুধু তাই নয়, বিমান প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ রুটে বড় সাইজের ফ্লাইট (বোয়িং-৭৩৭ এর মতো) পাঠিয়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী বহন করেছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো একসময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অল্প কিছু যাত্রী নিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে কানেক্টিং ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল। তবে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার পর থেকে এভাবে যাত্রী বহন বন্ধ করার নির্দেশ দেয় বেবিচক। 

বেবিচকের নির্দেশ অমান্য করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী বহন করছে। এ ছাড়া এখনো বিমান অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটের প্রতি সিটে ২ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। এতে বছরে বিমানের ১৬০ থেকে ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

বিমানের বর্তমান এ ‘অসুস্থ’ প্রতিযোগিতা বন্ধ করে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে সালমান এফ রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো।

এআর/আরএইচ