সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটের টিকিটে অসম প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটির এমন প্রতিযোগিতার অবসান চেয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো।

মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছে এভিয়েশন অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এওএবি)।

এওএবির মহাসচিব ও নভো-এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান এবং সহ-সভাপতি ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে ৫টি বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এতে বলা হয়, প্রতি মাসেই জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিচালন ব্যয় মেটাতে সম্প্রতি বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে সরকার প্রদত্ত সহায়তায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহনের ফলে বেসরকারি এয়ারলাইন্স অকল্পনীয় অসম প্রতিযোগিতার মুখে পতিত হয়েছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর চাইতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ সব রুটেই কম ভাড়া নির্ধারণ করেছে। যা কোনোভাবেই ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক নয়।

আরও পড়ুন : ৩০৯২ কোটি টাকা দেনা রেখে ৩২৮ কোটির রেকর্ড লাভ দেখাল বিমান!

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা হিসেবে আমাদের সবার গর্বের বিষয়। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এবং তার সুযোগ্য কন্যার হাতে পুনর্গঠিত বিমানকে আমরা প্রতিযোগী হিসেবে বিবেচনায় না নিয়ে আমরা অনুযোগী হিসেবে বিবেচনা করতে চাই। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা একটি টেকসই ও সুস্থ এয়ারলাইন্স খাত গঠনে সংকল্পবদ্ধ।

সাম্প্রতিক সংকট মোকাবিলায় তারা চিঠিতে ৪টি সুপারিশ ও এগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

আইন ও আদেশমালা

দীর্ঘ দিন পর ২০১৭ সালে সংসদে বেসামরিক বিমান চলাচল আইন প্রণীত হয়। কিন্তু সেই আইনের আলোকে প্রয়োজনীয় নীতি এবং সিভিল এভিয়েশন আদেশমালা অপর্যাপ্ত এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এই সবকিছু উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল রেখে দ্রুত প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।

জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য

বাংলাদেশে অতি মূল্যায়িত জেট ফুয়েলের কারণে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত। একটি এয়ারলাইনের পরিচালনা ব্যয়ের প্রায় ৫০ ভাগই খরচ হয় জেট ফুয়েল ক্রয়ে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য জেট ফুয়েল  আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি মূল্যে ক্রয় করতে হয়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার তুলনায় অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় প্রায় ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে যখন তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন আমাদের দেশেও তা বাড়ানো হয়। কিন্তু বিশ্ব বাজারে যখন দাম কমে, তখন আমাদের এখানে তা কমানো হয় না। জেট ফুয়েল আমরা শুধুমাত্র পদ্মা অয়েলের কাছ থেকেই কিনতে বাধ্য। 

আরও পড়ুন : আনফিট ক্রুদের ‘ফিট’ বলে ফ্লাইটে পাঠাচ্ছে বিমান!

আপনার অবগতির জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতি মাসেই জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি করে। জেট ফুয়ের কেনার প্রক্রিয়াটি যদি আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত থাকত তাহলে বিমান সংস্থাগুলো তাদের পছন্দ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারত।

সিভিল এভিয়েশন কর্তৃক নির্ধারিত উচ্চহারে চার্জ ও সারচার্জ

সিভিল এভিয়েশন এর নির্ধারিত চার্জগুলো (অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল) বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক মানদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যধিক বেশি। সাধারণত জ্বালানি তেল, গ্যাস বা অন্যকিছুর দাম বাড়ানোর আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। কিন্তু এভিয়েশনের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম অনুপস্থিত। এছাড়া বকেয়া পাওনার উপর নির্ধারিত সারচার্জও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। 

আরও পড়ুন : বিমানের সেপ্টেম্বরের ২২ শ’ টিকিট হাওয়া, উমরাহর ভাড়া দেড় লাখ!

কোনো এয়ারলাইন্স সময়মত বিল পরিশোধ না করতে পারলে বকেয়া বিলের উপর সারচার্জ দিতে হবে এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। তবে সেই সারচার্জের হার যৌক্তিক ও পরিশোধযোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ তার বিভিন্ন পাওনার উপর মাসিক ৬% অর্থাৎ বছরে ৭২% হারে সারচার্জ আরোপ করে চক্রবৃদ্ধি হারে আরোপ করে মোট পাওনা আদায় করে। এ মাত্রাতিরিক্ত হার এয়ারলাইন্সকে বিরাট দেনার চাপে ফেলে দিচ্ছে।

উচ্চ করহার ও বিদ্যমান বিধান

এয়ারলাইন সংস্থাগুলোকে (বাংলাদেশ বিমান ছাড়া) যন্ত্রাংশ আমদানিতে অনেক বেশি ট্যাক্স দিতে হয়। কাগজে কলমে উড়োজাহাজের খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে শূন্য শতাংশ ট্যাক্সের উল্লেখ থাকলেও ক্ষেত্র বিশেষ ১৫ থেকে ১৫০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয় এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলোকে। যন্ত্রাংশ কাস্টমস ছাড়করণে হয়রানির শিকার হতে হয় এবং অযৌক্তিকভাবে বিরাট কর দিতে বাধ্য হয়। এমনিতেই উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশের দাম অনেক, তার মধ্যে উচ্চ হারে ট্যাক্স দেওয়ার ফলে তা দেশের এভিয়েশন খাতে নীরব ঘাতকের ভূমিকা পালন করছে। উড়োজাহাজগুলোকে সচল রাখতে অনেক সময় স্বল্প সময়ের মধ্যে দাম পরিশোধ করে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। কিন্তু এখানেও সমস্যা রয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয় এলসির মাধ্যমে যা বিশ্বে কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়।

বিষয়গুলো সমাধানে সংসদীয় কমিটির কাছে দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছে এওএবি।

এআর/এসকেডি