৬৮ যাত্রী এবং চারজন ক্রু নিয়ে গতকাল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখরা যাওয়ার পথে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার বলছে, গত ৩ দশকে ২৭টি বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে নেপাল। 

নেপালের বিমান যাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) এয়ারস্পেসে নামতে না পারে, সেই কারণে ২০১৩ সালে ইইউ নেপালের সমস্ত বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ২০২২ সালের মার্চ মাসে নেপাল সরকারের পক্ষ থেকে ইইউকে এই নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হলেও ইইউ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে নেপালের বিমানগুলোকে কালো তালিকাতেই রেখেছে। 

এছাড়া নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টেরও বিমান দুর্ঘটনার জন্য আলাদা পরিচিতি রয়েছে। বিমানবন্দরটিতে আন্তর্জাতিক বিমান অবতরণ শুরু হওয়ার পর থেকে ৭০টিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিমানের পাশাপাশি সেখানে হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত হয়েছে।  

আরও পড়ুন : পাইলট স্বামীর মৃত্যুর ১৬ বছর পর একই পরিণতি অঞ্জুরও

একের পর এক বিমান দুর্ঘটনার কারণে এই বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রায়শই আলোচনা হয়।

১৯৬৯ সালের জুলাইয়ে রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান নেপালের সিনারা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। বিমানবন্দরে অবতরণ করার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হয় বিমানটি। ৩১ যাত্রী এবং ৪ ক্রু ওই ঘটনায় মারা যান।
 
১৯৯২ সালের জুলাইয়ে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও উড়ান দেয় থাই এয়ারওয়েজ সংস্থার এয়ারবাস ৩১০। ১৪ ক্রু এবং ৯৯ যাত্রী নিয়ে কাঠমান্ডুর পথে থাকা বিমানটি একটি পাহাড়ে ধাক্কা লাগে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ১১৩ জনের সবার মৃত্যু হয় ওই ঘটনায়।  

ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই পাকিস্তানের করাচি থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান। এ বিমানটিও পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়। 

পরের বছরের জুলাই মাসে এভারেস্ট এয়ারের একটি ডর্নিয়ার বিমান নেপালের বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।  

এর প্রায় ৭ বছর পর আবার বিমান দুর্ঘটনা ফেরে নেপাল। ২০০০ সালের জুলাইয়ে রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান নেপালের ধানঘাধি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ২৫ জনের মৃত্যু হয়।   

আরও পড়ুন : নেপালে বিমান বিধ্বস্তের সময় লাইভ করছিলেন এক যুবক

২০০১ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নেপালের রাজকন্যা প্রেক্ষা শাহা। 

এরপর ২০০৬ সালের জুন মাসে আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে একটি বিমান। একই বছর আরেকটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় যাত্রী এবং ক্রুসহ মোট ২৪ জন নিহত হন।  

২০১১ সালে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয় বুদ্ধা এয়ারের একটি বিমান। এতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। 

২০১২ সালের মে মাসে পোখরা বিমানবন্দর থেকে জমসম বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার পথে ডর্নিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়।  

২০১৫ সালে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৮ জন।  পরের বছর আরেকটি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দু’জন।  

এছাড়া ২০১৮, ২০১৯ সালেও দুর্ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে নেপালকে। ২০২২ সালেও ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এ বছরের শুরুটাই হলো আরেক ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে। 

এনএফ