মোহাম্মদ মনছুর (৫৫)। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফ্লাই দুবাইয়ের প্লেনে চড়ে আসছিলেন চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এ সময় প্লেনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্লেনের পাইলটকে এ খবর দেওয়া হলে অসুস্থ যাত্রীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখতে বার্তা পাঠান শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে। 

এরপর কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে বিমানবন্দরের ফায়ার ইউনিটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এর মধ্যেই সোমবার (২২ এপ্রিল) সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাই দুবাই এফজেড-৫৫৩ উড়োজাহাজটি। বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর অ্যাম্বুলেন্স খুঁজে পাননি বিমানের ক্রুরা। এক ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও অসুস্থ রোগীকে নিতে এগিয়ে আসেনি কোনো অ্যাম্বুলেন্স। জরুরি মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এমন গাফিলতিতে হতবাক যাত্রীরা।

জানা গেছে, বিমানবন্দরের ফায়ার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর শরীফের অনুমতি ছাড়া কোনো গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্স বের না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সময় ওমর শরীফের মোবাইল বন্ধ থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। ততক্ষণে বিমানবন্দরে হইচই পড়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে অসুস্থ যাত্রী মনছুরের স্ত্রী জুবলি আক্তার বলেন, আমরা আগে থেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলাম। সকাল ৯টার দিকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, মনছুরের কোনো স্বজন আছেন কি-না। আমি দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছিলাম। কোথায় গেলে তাকে খুঁজে পাব সেটিও বুঝতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে ৯টার পরে তাকে একটা অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। 

বর্তমানে অসুস্থ মনছুর চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৫১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি বলেন, সৌদি আরব থেকে দুবাই হয়ে চট্টগ্রামে আসার জন্য বিমানে উঠি। এরপর আর কিছু জানি না।

ওই ফ্লাইটে অসুস্থ রোগী থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফ্লাই দুবাইয়ের চট্টগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার নাজিয়া আফরিন।

এদিকে, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফায়ার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর শরীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার নির্দেশনা ছিল যাতে কেউ ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহার না করে এবং অপারেশনে যেন বিঘ্ন না ঘটে। কিন্তু কন্ট্রোল রুম থেকে নির্দেশ দিলে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি পাঠানো হয়। অসুস্থ মনছুরকে নিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে দেরি হয়নি বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

বিমান অবতরণের এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর অসুস্থ যাত্রীকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা ও তার মোবাইল বন্ধ থাকার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাক্তাররা সেখানে থাকেন। তারা দেখার পর নির্দেশনা দেন যে, অসুস্থ যাত্রীকে কী করতে হবে। এরপর আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সেদিন আমার মোবাইল বন্ধ ছিল না।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্টেশন এয়ার ট্রাফিক অফিসার (সেটু) ও ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বাহারুল হায়াত দিপুকে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। এরপর মেসেজ দিয়েও তার সাড়া মেলেনি।

আরএমএন/কেএ