করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সরকারি ঘোষণায় বন্ধ বাস-ট্রেন। এবার বাড়ি ফেরার একমাত্র ভরসা আকাশপথ। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটের ৬০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে যাবে বলে ধারণা করছে এয়ারলাইন্সগুলো।

এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, গত ৪-৫ বছর ধরেই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরার জন্য আকাশপথকে বেছে নিচ্ছেন যাত্রীরা। ঈদের ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই আকাশপথের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যেত। গত বছরের মতো এ বছরও লকডাউনের কারণে অনেকে বাড়ি ফেরা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তবে ইতোমধ্যে ঈদের আগের দুই দিনের অর্থাৎ মে মাসের ১২ ও ১৩ তারিখের ঢাকা ছাড়ার প্রায় ৬০ শতাংশ টিকিট শেষ হয়ে গেছে। চাহিদা বাড়লে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার কথা ভাবছে এয়ারলাইনসগুলো। 

তারা বলছেন, এবার সব স্কুল-কলেজ বন্ধ। পাশাপাশি লকডাউন চলছে। তাই অনেকেই আগে থেকে বাড়ি চলে গেছেন। শেষ মুহূর্তে তাদের বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। এছাড়া যারা এভিয়েশনে যাতায়াত করেন তারা একটু সচেতন বেশি, তারা লকডাউনে মুভ করতে চান না। তাই অন্যান্য বারের চেয়ে এবার টিকিট বিক্রির গতি কিছুটা কম।

বারিধারার বাসিন্দা সাজ্জাদুর রহমানের বাড়ি পঞ্চগড়। তিনি পরিবারসহ ১৩ মে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে সৈয়দপুর যাওয়ার টিকিট কেটেছেন। সাজ্জাদুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবার ঈদের মাসখানেক আগেই টিকিট কেটে রাখি। এবার লকডাউনের কারণে ফ্লাইট চলবে কি না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। অবশেষে টিকিট কেটে ফেললাম। তবে ঢাকায় ফেরার সময় আবার কোনো ঝামেলা হয় কি না, ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায় কি না, সেই অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।

এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, আগামী ১৪ অথবা ১৫ মে ঈদুল ফিতর উদযাপন হতে পারে। ১৪ তারিখ ঈদ ধরে নিয়ে এর আগের দুই দিন ১২ ও ১৩ মে যাত্রীদের টিকিটের চাহিদা বেশি। সবচেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি হচ্ছে যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটের। আর ঢাকায় ফেরার জন্য ১৬ ও ১৭ মে’র ফ্লাইটের টিকিটের চাহিদা বেশি। ইতোমধ্যে এসব ফ্লাইটের টিকিট কেনা শুরু করেছেন যাত্রীরা।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কোভিড-১৯ সময়ের প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যসুরক্ষা বজায় রেখে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ঈদেও আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। ঈদে আমরা যাত্রীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। ঢাকা থেকে বাড়িফেরা ও ঢাকায় ফেরার টিকিটের বিক্রি বাড়ছে। ইতোমধ্যে বাড়ি ফেরার ৬০ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার বলেন, বিমানে মে মাসের ১১ ও ১২ তারিখের টিকিটের চাহিদা বেশি। এই দুইদিন বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট সংখ্যা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যশোর, বরিশাল ও সৈয়দপুর রুটে আমরা যাত্রী বেশি পাচ্ছি। বর্তমানে এই রুটগুলোতে দৈনিক ২টা করে ফ্লাইট চলছে। চাহিদা বিবেচনায় আমরা ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।

নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের প্রধান মেজবাহ-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোমধ্যে নভোএয়ারের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। সব অভ্যন্তরীণ রুটেই টিকিটের চাহিদা বেশি। চাহিদার ভিত্তিতে ঈদের আগে ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি আমরা।

কোন রুটে কার কত ফ্লাইট? 
৫ এপ্রিল থেকে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। পরে ২১ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার ছাড়া অভ্যন্তরীণ সব রুটে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউএস-বাংলা চট্টগ্রাম রুটে দৈনিক ৩টি, সিলেটে ২টি, সৈয়দপুরে ২টি, যশোরে ২টি এবং বরিশাল ও রাজশাহীতে ১টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বিমান বাংলাদেশ চট্টগ্রাম রুটে দৈনিক ৩টি, যশোর, সিলেট, সৈয়দপুর ও বরিশালে ২টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আপাতত রাজশাহী রুটে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে বিমান।

নভোএয়ার চট্টগ্রাম রুটে দৈনিক ৩টি, যশোর, সিলেট ও সৈয়দপুরে ২টি এবং বরিশাল ও রাজশাহীতে ১টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। 

এসব এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, সৈয়দপুরের ওয়ানওয়ে ভাড়া সর্বনিম্ন ৩২শ টাকা।

এআর/এইচকে/জেএস