বোয়িংকে এক মাসের জন্য ইঞ্জিনিয়ার পাঠাতে বললো বিমান
সম্প্রতি একাধিক প্রযুক্তিগত সমস্যার মুখে পড়ে বহরে নিরাপত্তা মান যাচাইয়ের জন্য মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সহায়তা চেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এজন্য অন্তত দুজন বোয়িং ইঞ্জিনিয়ারকে এক মাসের জন্য পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. মো. সাফিকুর রহমান বলেন, আমরা বোয়িংকে অনুরোধ করেছি অন্তত দুইজন ইঞ্জিনিয়ার পাঠাতে, যারা আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের সঙ্গে এক মাস কাজ করবেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, ইতোমধ্যে বোয়িংয়ের দক্ষিণ এশিয়া অফিসের (নয়াদিল্লি) সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি বোয়িংয়ের ইঞ্জিনিয়াররা তাদের আরও উৎসাহ ও সহায়তা দেবেন।
জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটি ইতোমধ্যে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যাতে নিরাপত্তা, জবাবদিহিতা ও কার্যক্রমিক নির্ভরযোগ্যতা আরও জোরদার করা যায়। এজন্য চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ১ জুলাই থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখবে।
বিজ্ঞাপন
এ প্রসঙ্গে বিমান সিইও বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিটি উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ রেকর্ড ও অপারেশনাল প্রক্রিয়া পরীক্ষা করবে, সমস্যা চিহ্নিত করবে এবং কোনো অবহেলা বা গাফিলতি থাকলে দায় নির্ধারণ করবে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যায়।
তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবার মানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা বিস্তৃত তদন্ত ও কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছি। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঢাকা–আবুধাবি ফ্লাইটে টয়লেট ফ্লাশ বিকল হওয়ার ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্মী ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। দুই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, একজন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং চট্টগ্রামে আরেকজনকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত প্রতিস্থাপনের সুবিধার্থে জেদ্দা, দুবাই, মদিনা, দাম্মাম, আবুধাবি ও শারজাহে অতিরিক্ত চাকা মজুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত চাকার জন্য ক্রয়াদেশও দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেদ্দায় চাকা ফেটে যাওয়ার ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা ফ্লাইট অপারেশনসের পরিচালক তদারকি করবেন। একই সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট) এবং প্রধান ইঞ্জিনিয়াররা সরাসরি তদারকি করবেন। এ ছাড়, ১৮ আগস্ট থেকে রাত্রিকালীন বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ শিফট চালু করা হয়েছে, যাতে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি নিশ্চিত করা যায়।
এমডি জানান, বিমানের ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পর্যালোচনা চলছে। এ নিয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কম্পোনেন্ট সার্ভিসেস প্রোগ্রাম (সিএসপি) ও রিকমেন্ডেড স্পেয়ার পার্টস লিস্ট (আরএসপিএল) হালনাগাদ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। টেইলার্ড পার্ট প্যাকেজেস (টিপিপি) পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে, যেন প্রকৃত ব্যবহার অনুযায়ী যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা যায়। একই সঙ্গে বিমানের ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে এবং নতুন শিক্ষানবিশ মেকানিক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত জনবলকে আরও শক্তিশালী করাই এর লক্ষ্য। সূত্র- বাসস
এআর/এমজে