অতিরিক্ত লাগেজের কারণে সিলেটের খাদিমনগর এলাকায় প্রবাসী জামিলা চৌধুরী যুক্তরাজ্যে যেতে না পারার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে তারা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার জানান, সিলেটের ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের মধ্যে একজনকে অপেশাদার আচরণের জন্য সাময়িক বরখাস্ত এবং অপর একজনকে সিলেট স্টেশন থেকে প্রত্যাহার করেছে। প্রকৃত ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া যাত্রীকে তার ইচ্ছানুযায়ী বিমানের পরবর্তী ফ্লাইটে লন্ডন পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

যাত্রীর লন্ডনের ফ্লাইট মিস নিয়ে বিমান জানায়, ২৮ জুলাই বিজি-২০১ এর যাত্রী জামিলা চৌধুরী সিলেট থেকে লন্ডন যাওয়ার সময় তার প্রাপ্য ৪০ কেজির জায়গায় ৮১ কেজি অর্থাৎ, অতিরিক্ত ৪১ কেজি লাগেজ নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি অতিরিক্ত লাগেজের ফি পরিশোধ ছাড়াই বোর্ডিং কার্ড ইস্যু করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু যাত্রী অতিরিক্ত লাগেজের নির্ধারিত ফি পরিশোধ না করায় এবং অতিরিক্ত লাগেজের বিষয়ে যাত্রীর সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হওয়ায় সৃষ্ট জটিলতার কারণে তিনি লন্ডন ফ্লাইট মিস করেন।

বিমান আরও জানায়, বিষয়টি সিলেট স্টেশন ম্যানেজারের নজরে এলে তিনি যাত্রীকে তার অফিস কক্ষে বসিয়ে আলোচনাক্রমে বিষয়টি সুরাহা করেন এবং যাত্রীর চাহিদা মোতাবেক পরবর্তী ফ্লাইটে টিকেট রিসিডিউল করে দেন।

বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই যাত্রী বোর্ডিং কার্ড ইস্যুর ডেস্কের সামনে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ঘটনার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে এ বিষয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। ওই ভিডিও ফুটেজের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে এবং পেশাদারিত্ব বিবেচনায় বিমানের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পর দিন যাত্রীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

বুধবার (২৮ জুলাই) সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে দুপুর ২টা ৪০মিনিটে যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা ছিল জামিলার। তবে তাকে সেদিন বোর্ডিং পাস দেয়নি বিমান। যার কারণে ফ্লাইট মিস করেন তিনি।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী জামিলা চৌধুরী জানান, তার বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে জরুরিভিত্তিতে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসেন। বুধবার তার যুক্তরাজ্য ফেরার কথা ছিল। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চেক ইনের সময় তার কাছে তিনটি লাগেজ ছিল। লাগেজগুলোর ওজন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি ছিল।

জামিলা চৌধুরী বলেন, আমার তিনটি লাগেজের ওজন বেশি ছিল। তবে আমি একটি লাগেজ নিতে চাইলে তারা আমাকে বলেন যে গেট ক্লোজ হয়ে গেছে। এর আগে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছে- আমি যাতে মোট ৫৩ কেজি ওজনের লাগেজ নেই। এর জন্য আমাকে ২৬ হাজার টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছিল। তবে আমি তা দিতে অস্বীকার করি এবং একটি লাগেজ নেওয়ার কথা জানাই। সেই সময় কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায় যে কাউন্টার ক্লোজ হয়ে গেছে। আমি আর যেতে পারব না।

জামিলা চৌধুরীর ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বিমানবন্দরের অভিযোগ বক্সে অভিযোগ করতে যান। সেখানে এক কর্মকর্তার কাছে অভিযোগপত্র চাইলে সেই কর্মকর্তা তাকে স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন। সেই সময় তিনি স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে তিনি তিনতলায় রয়েছেন বলে আরেক কর্মকর্তা জানান। এমনকি আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এই বিষয়ে সাহায্য চাইলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করার কথা জানানো হয়।

জামিলা চৌধুরী বলেন, আমি বিমানবন্দরে অনেকের কাছেই সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউই আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি। আমি তিন ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে প্রবেশ করি। তবুও আমি যুক্তরাজ্য ফেরত যেতে পারিনি। এমনকি ডেস্কে বসা একজন কর্মকর্তা আমার মুখের ওপর পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে আমাকে পাগল বলেও মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরের ভেতরে চার জন কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের অনেক ডেকেও আমি কোনো সাহায্য পাইনি। তারা উল্টো বসেছিলেন কাউন্টারের ভেতরে। তখনও কাউন্টার বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশে এসে আমি যে খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি আর কোনো প্রবাসী যেন এর মধ্য দিয়ে না যান। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার সঙ্গে যা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।

এআর/এসএসএইচ