প্রথমবারের মতো নিজস্ব জনবল ও ব্যবস্থাপনায় ড্রিম লাইনারের সি-চেক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ছয় লাখ মার্কিন ডলারের (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ) আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।

রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় বলাকায় বিমানের ড্রিম লাইনার এয়ারক্রাফটের সফল সি-চেক সমাপনী ও চীনের উহান শহরে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বিমান ক্রুদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমানের দক্ষ প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানদের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিম লাইনার উড়োজাহাজের সি-চেক দেশেই সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় বিমানের আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে ছয় লাখ মার্কিন ডলার। এ বছর আরও একটি ও আগামী বছর আরও চারটি ড্রিম লাইনারের সি-চেক দেশেই সম্পন্ন হবে, ফলে আরও তিন থেকে চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সাশ্রয় হবে বিমানের।

উল্লেখ্য, সি-চেক একটি দীর্ঘমেয়াদি, জটিল এবং উচ্চ কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন চেক, যাতে উড়োজাহাজের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্মোচনের মাধ্যমে বিশদভাবে নিরীক্ষা করার মাধ্যমে উড়োজাহাজকে নভোযোগ্য করা হয়। বোয়িং-৭৮৭ মডেলের ড্রিম লাইনারের সি-চেক প্রতি তিন বছর পর পর শেষ করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ আগস্ট থেকে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিম লাইনার ‘আকাশবীণা’র প্রথম সি-চেক কার্যক্রম শুরু করে ১০ কর্মদিবসে সফল পরিসমাপ্তি করে বিমান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের খুব কম এয়ারলাইন্সেরই ড্রিম লাইনারের মতো আধুনিক উড়োজাহাজ সি-চেক করার সক্ষমতা রয়েছে। আগে বিমানের যেকোনো ধরনের নতুন উড়োজাহাজের সি-চেক জার্মানি, ইতালি অথবা সিঙ্গাপুরে বিদেশি এমআরও (মেনটেইন্যান্স, রিপেয়ার অ্যান্ড অভারহল অর্গানাইজেশন)-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। নিজস্ব জনবল ও ব্যবস্থাপনায় ড্রিম লাইনারের সি-চেক সম্পন্ন করা বিমানের সক্ষমতা বৃদ্ধির উজ্জ্বল উদাহরণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমানকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করার ফলেই এ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিমানের বহরে থাকা উড়োজাহাজগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের চেক দেশেই শেষ করতে দক্ষ জনবল ও প্রকৌশল অবকাঠামো তৈরিতে বিমানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে। বিমান এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্নের স্বনির্ভর ও উন্নত সোনার বাংলা বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে অবরুদ্ধ বাংলাদেশিদের উদ্ধারে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বিমানের কর্মীদের প্রশংসা করেন মাহবুব আলী।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সবসময়ই দেশ ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করে। এ কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও তার ব্যত্যয় হয়নি। বিমানের পাইলট ও কেবিন ক্রুরা দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে দায়িত্ব পালন করেছেন। অপারেশন সীমিত করা হলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর কর্মীদের আন্তরিকতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের কারণেই তখন সারাবিশ্ব থেকে আমরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাইনি।

অনুষ্ঠানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালে মোস্তফা কামাল, বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এআর/এসএসএইচ