বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিনিয়র পাইলট ও বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করেছে বিমান।

সম্প্রতি বেতন কর্তন বাতিলসহ পাইলটদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আন্দোলন করেছিল পাইলটরা। সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। তবে ঠিক কী কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র ঢাকা পোস্টকে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বোয়িং-৭৮৭ এর পাইলট ছিলেন।

বিমান সূত্র জানায়, সোমবার তাকে চাকরিচ্যুতির চিঠিটি ইস্যু করেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল। এর একটি কপি মঙ্গলবার তাকে ই-মেইলযোগে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের আর্টিকেল ৫৯(বি) অনুযায়ী বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এই চাকরিচ্যুতির আদেশ দিয়েছেন। গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিমানের ২৬৫তম বোর্ড সভায় বিমানের এমডিকে চাকরিচ্যুতির আদেশ প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়।’ 

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ক্যাপ্টেন মাহবুব বিমানে চাকরি করাকালীন কোনো পাওনা থাকলে সেগুলো পরিশোধসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। অবিলম্বে এ আদেশ কার্যকর করতে বিমানের অ্যাডমিন শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত যেখানে

২০২০ সালের মে মাস থেকে বিমানের পাইলটদের তাদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের ১৩ জুলাই বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের একটি অফিস আদেশে সংস্থাটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। কিন্তু পাইলটদের বেতন কাটার বিষয়টি বহাল থাকে। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ হন পাইলটরা।

বেতন সমন্বয় না হলে বিমানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। আন্দোলনে সৌদি আরবের দাম্মাম, কাতারের দোহা, আবুধাবি ও দুবাই রুটে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে বিমানের এমডির আশ্বাসে তারা সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন তারা। বেতন সমন্বয় না করায় অক্টোবরে আবারো কর্মবিরতির ডাক দেন তারা। অনিশ্চয়তায় পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট। বিমানের কোটি কোটি টাকার বিক্রিত টিকেট ফেরত দেন যাত্রীরা। বাপার সভাপতি হিসেবে পাইলটদের পক্ষে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। 

তার চাকরিচ্যুতির প্রকৃত কারণ উল্লেখ না করলেও বিমান জানায়, আন্দোলনের অংশ হিসেবে পাইলটরা মাসে ৭৫ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট পরিচালনা এবং ৮ দিনের কম ডে-অফ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এর ফলে বিমানের কাতার, দুবাই, ওমান ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট সিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়েছে। বাপা সভাপতির নেতৃত্বে পাইলটরা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কৃত্রিম পাইলট সংকট তৈরি করে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে।

এ বিষয়ে বিমানের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি।

এআর/ওএফ