মেলা মানেই ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মিলনে পণ্য আদান-প্রদান। মেলাকে ঘিরে চলে উৎসবের আমেজ। আনন্দে মেতে ওঠে সর্বস্তরের মানুষ। কিন্তু সাধারণ মেলা ও উৎসবের এই ধারণাকে পেছনে ফেলে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হলে ভিন্নধর্মী একটি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

যেখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক স্টল-দোকান বা ক্রেতা-বিক্রেতা নেই। সবাই এসে একটি করে বই দিচ্ছেন। এক কাপ চা খেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে চলে যাচ্ছেন। এ উৎসব শুধুমাত্র এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সব হলের শিক্ষার্থীদের জন্যে।

শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) স্যার এ এফ রহমান হলের অভ্যন্তরীণ প্রাঙ্গণে ‌‘এক কাপ চা, একটি বই এবং এক প্রজন্ম ভালবাসা’ স্লোগানকে সামনে রেখে দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করে স্যার এ. এফ. রহমান হল ছাত্রলীগ ও সাহিত্য সংসদ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যে কেউ একটি বা সাধ্যমতো একাধিক বই স্বেচ্ছায় দিচ্ছেন। বইয়ে দাতারা তাদের নাম, বিভাগ ও সেশনসহ ব্যক্তিগত পরিচয় লিখে বইগুলোর পরবর্তী পাঠকের উদ্দেশ্যে একটি করে মেসেজ লিখে দিচ্ছেন। আর উৎসবে যে যাচ্ছে তাকে আপ্যায়ন স্বরূপ এক কাপ চা খাওয়ানো হচ্ছে। আর আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একদল শিল্পী। যারা লোকগান গেয়ে বই উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলছেন। উৎসবে পাওয়া বইগুলো স্যার এফ রহমান হল সাহিত্য সংসদের লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করা হবে। হলের যেকোনো শিক্ষার্থী বইগুলো পড়তে পারবেন।

উৎসবে বই প্রদানকালে ওই হলের শিক্ষার্থী শিপন মাহমুদ বলেন, আমি এখানে চারটি বই দিলাম। এরকম একটি আয়োজনে অংশ নিতে পেরে অনেক আনন্দিত এবং নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করছি। আমার মনে হয়, এর মাধ্যমে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে একটি শুভ বার্তা পৌঁছে দিতে পারব।

বই উৎসব পরিদর্শনে গিয়ে ঢাবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, এটি একটি চমৎকার আয়োজন। আয়োজকদের সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তারা শুধু এই উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আগামী প্রজন্মের সঙ্গে এই প্রজন্মের একটি সম্পর্ক সৃষ্টির পাশাপাশি বই পড়ার সংস্কৃতিকে শিল্পে রূপান্তরের চেষ্টা করছে তারা। আশা করি অন্যান্য হলগুলোও এমন ক্রিয়েটিভ কিছু আয়োজন করবে।

ব্যতিক্রমধর্মী এ বই উৎসবের বিষয়ে এফ. রহমান হল সাহিত্য সংসদের সভাপতি নাসিম হাসান বলেন, ‘এক কাপ চা, একটি বই এবং এক প্রজন্ম ভালবাসা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে, হল পর্যায়ে এক ঝাঁক উদ্যমী পাঠক তৈরির জন্য ও বই পড়ার প্রতি ছাত্রসমাজের আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যেই মূলত আমাদের এই বই উৎসব -২০২২ এর আয়োজন। আশা করা যায়, আমাদের এই উৎসব প্রতিবছর পালনের মাধ্যমে আমরা ছাত্রদের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ পূর্ণমাত্রায় সৃষ্টি করতে পারব।

স্যার এ. এফ. রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উৎসবের প্রধান উদ্যোক্তা মোনেম শাহরিয়ার মুন বলেন, আমাদের হল সাহিত্য সংসদের ইতোমধ্যে ১৩শ বই আগে থেকেই আছে। আমরা চিন্তা করেছি সাহিত্য সংসদে আরো দুই থেকে আড়াই হাজার বই তুলে দেব। এজন্যই মূলত আমাদের এ আয়োজন। তবে এ উৎসবের আরেকটি উদ্দেশ হচ্ছে যে, এখানে যিনি বই দিচ্ছেন, বইয়ে তার পরিচয় লেখা থাকবে। এই ব্যক্তিগত পরিচয় এবং তথ্য অনুসারে তাদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পাঠকরা যোগাযোগ করে যেন একটি ভালোবাসার সুসম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা এই উৎসব থেকে ৯৮৮টা বই পেয়েছি। আরো বই পাব বলে আশা করছি। সব মিলে দুই হাজার বই পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আমরা চাই এই আয়োজন শুধু ২০২২ সালেই সীমাবদ্ধ না থেকে ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্বে আসবে তারাও এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখুক। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলগুলোর প্রতিও আমার আহ্বান থাকবে যে, তারাও যেন এ ধরনের আয়োজন করে।

এইচআর/ওএফ