সাতসকালে খোশ মেজাজে ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন সাইফুল সুমন। হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন। যা দেখেছেন তাতে অন্তরাত্মা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। দ্রুত পায়ে এগিয়ে যাবেন, নাকি উল্টো দিকে দৌড়ে পালাবেন—তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। কারণ পাশেই ১০ ফুট দীর্ঘ ‘রাজ গোখরা’ সাপ দেখতে পেলেন।

মারতে নয়, সাপকে উদ্ধার করতে সুমন তখন খবর দিলেন একজনকে। তিনি এসে উদ্ধার করলেন। সাপ লেজ দিয়ে তার হাত পেঁচিয়ে খেলা শুরু করে কিন্তু ছোবল দেয় না। এ যেন ঠিক বন্ধুর মতো আচরণ। সাপের এই বন্ধুর নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। রফিক এবং তার দল মিলে এ পর্যন্ত একশোর বেশি সাপ উদ্ধার করেছেন। যার মধ্যে বিষধর, মৃদু বিষধর এবং বিষহীন সাপ রয়েছে।

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পঞ্চাশের বেশি সাপ ধরেছে তারা। ক্যাম্পাসে সাপের দেখা মিললেই ডাক আসে রফিকুলের। বিশেষ করে যখন হল, ফ্যাকাল্টি, লোকালয়ে সাপ প্রবেশ করে উদ্ধারকাজে ছুটে যান রফিক এবং তার স্বেচ্ছাসেবীরা।

রফিক জানান, দ্বিতীয় বর্ষে গবেষণার কাজে মাঠ পর্যায়ে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে থাকাকালীন সিনিয়রদের অনুসরণ করে সাপ ধরার কাজ আয়ত্ত করেন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সাপ উদ্ধারে আস্তে আস্তে নেমে পড়েন তিনি।

সাপ ধরতে ভয় করে কি না জানতে চাইলে রফিক বলেন, আমিও মানুষ। প্রাণের ভয় তো আমারও আছে। সত্যি বলতে ভয়কে জয় করতে না পারলে তো কখনই মানুষ ও সাপের প্রাণ বাঁচাতে পারব না। কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে।

সচেতনতা সম্পর্কে বলেন, সাপ সত্যি বলতে একটি নিরীহ প্রাণী। এই প্রাণী না কানে শুনতে পায়, না মানুষকে মনে রাখতে পারে। এদের স্মৃতিশক্তি প্রখর নয়। এছাড়া পোষ মানার মতো নয়। কেবল সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে নিজের প্রাণ বাঁচাতে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয় জড়িত বলে সাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। অবেহেলা করলেই জীবনের ঝুঁকি। সাপে কাটলে ওঝা নয় হাসপাতালে চিকিৎসা হয়।

চবি ক্যাম্পাসে সাপের বন্ধু হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলামের বাড়ি সীতাকুণ্ডে। বাবার চাকরি সূত্রে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে পড়ালেখা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জে। চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি।

সাপের ভয় দূর করতে ‘স্নেক অ্যাওয়ারনেস’

সাপ দেখলেই চারপাশে মানুষের তুমুল হৈচৈ শুরু হয়। লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রস্তুত সবাই। মেরে তবেই রণে ভঙ্গ দিতে হবে। এ দেশের গ্রামে-গঞ্জে প্রায়ই এমন দৃশ্য দেখা যায়। মানুষের মন থেকে সাপের ভয় দূর করতে এবং সাপকে বাঁচাতে রফিকুল ইসলাম গড়ে তোলেন ‘স্নেক অ্যাওয়ারনেস’ নামে একটি সংগঠন।

সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালে। অল্প সময়ে মানুষের কাছে সংগঠনটি সাপ বিষয়ক আস্থার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ১৫ জনের একটিভ রেসকিউয়ার ও পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ইমারজেন্সি রেসকিউ টিম ছাড়াও ৩০ জনের স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাদের ফলোয়ার সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। প্রতিদিনই সচেতনতার পাশাপাশি সাপ বিষয়ক বিভিন্ন সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন তারা।

এসপি