ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ, মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নানা আয়োজনে শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের শতবর্ষের মিলনমেলা। সকালে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষার্থী মো. মতিউল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

সকাল ১০টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ ও শোক প্রস্তাবের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরু হয়। সকাল পৌনে ১১টার দিকে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মোড়ক উন্মোচন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ শিল্পীর ১০০ ছবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অ্যালাইমনাইয়ের সভাপতি একে আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী মো. মতিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ডুয়ার সাবেক সভাপতি রকীব উদ্দীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু সামাদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে এ দেশের প্রতি তার অবদান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত স্মৃতিচারণ করে মো. মতিউল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীনতার মাসে আয়োজিত এই বছরের অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। আমি মনে করি যে, দেশকে আমি যা দিয়েছি, তার চাইতে দেশ আমাকে অনেক বেশি দিয়েছে। আমার কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে আমি ৩টি লাইফ-টাইম অ্যাচিভমেন্ট পেয়েছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্মান আপনারা আজকে আমাকে দিলেন ঢাকা ইউনির্ভাসিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এই ঐতিহাসিক সম্মেলনের প্রধান অতিথি করে।’

সভাপতির বক্তব্যে অ্যালামনাই সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পৌঁছানোর কথা ছিল সেখানে আসতে পারেনি। আমরা দেখেছি বিশ্বের ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ র‍্যাংকিংয়ের ভেতরে আনতে আমাদের সংগঠন কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাড়লেও সেগুলোর ধারণক্ষমতার ও সক্ষমতা বাড়েনি। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী অর্থাভাবে যথাযথভাবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে না। ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাদের জন্য কাজ করবে।’

অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মাতৃসম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হতে পেরে আমরা ভাগ্যবান। একটি মহামারি মোকাবিলা করে আজ আমরা একত্রিত হয়ে শতবর্ষ উদযাপন করছি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আমরা শিখেছি কীভাবে দেশের জন্য জীবন দিতে হয়, কীভাবে দেশকে গড়ে তুলতে হয়, কীভাবে জ্ঞানকে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। তাই শতবর্ষে দাঁড়িয়ে আমরা অঙ্গিকার করতে চাই একজন শিক্ষার্থীরও অর্থের অভাবে শিক্ষাজীবন ব্যাহত হতে দেব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও বিভাগীয় ‌অ্যালামনাই একটি পরিবার। আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যে কোনো সমস্যা, সুযোগ ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করে যাব।’

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি নয় বছর ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ছিলাম এবং সেই নয় বছর দেশে সামরিক শাসন ছিল। তখনও কিন্তু ছাত্র সংসদ ছিল। তারপর যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এলো তখন থেকে আশ্চর্যের বিষয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন থেমে গেল। ছাত্র সংসদের নির্বাচন ছিল উৎসব। সেখান থেকে মেধাবীরা বেড়িয়ে আসতো। মেধাহীন ছাত্ররা কখনো নির্বাচিত হতে পারত না। চৌকস ছেলেরা নেতৃত্বে আসত।’

তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে যে শুধু সম্পদ ও পুঁজি চলে যাচ্ছে তা নয় তারা যে মানবিক সম্পদ সেটা চলে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পরে যে তরুণরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন তারা অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন আর ফেরত আসেননি। মেধাবানরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে পারে এবং দেশে মেধার বিকাশ ঘটানোর পরিবেশ যাতে তৈরি হয় সে কাজে মনোযোগী হওয়া অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একটা বড় কর্তব্য হবে বলে আমি মনে করি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের যে জায়গায় পৌঁছেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই পৌঁছেছে। আমরা জানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে এই বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন। এটা আমাদের জন্য একটি বিশাল অর্জন। আমি বিশ্বাস করি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসবেন, তাদের হাত ধরেই এই বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, লেখক ও রাজনীতিবিদ ইনাম আহমদ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. হামিদা আক্তার বেগম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির, সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. রহমত উল্লাহ।

এইচআর/আইএসএইচ