ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কয়েকটি বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্ৰকাশে দীর্ঘসূত্রতা লক্ষ্য করা গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, সেমিস্টার শেষ হওয়ার পর দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশ করে পরের সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করার কথা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পরপর দুই সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ হয়নি। অথচ তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে, এমন বিভাগের সংখ্যা অনেক। 

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত আরবী বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ৩য় ও ৪র্থ সেমিস্টারের ফল আটকে আছে। এ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ১ম ও ২য় সেমিস্টারের ফলাফলও প্রকাশ হয়নি। আটকে আছে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ৩য় ও ৪র্থ সেমিস্টারের ফল। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ৩য় ও ৪র্থ সেমিস্টারের ফলাফলও প্রকাশ হয়নি। এছাড়া আটকে আছে এসব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সব সেমিস্টারের ফলাফল। টানা দুই সেমিস্টার রেজাল্ট না দেওয়া এসব বিভাগ পরবর্তী সেমিস্টারের পরীক্ষার রুটিনও প্রকাশ করেছে। 

ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতায় হতাশা ব্যক্ত করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটি বড় ভোগান্তি। আরেকটি পরীক্ষায় বসার আগে পূর্ববর্তী সেমিস্টারের ফলাফল জানা জরুরি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তারা।  

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বিভাগে টানা দুই সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ হয়নি। কিন্তু পরের সেমিস্টারের মিডটার্ম পরীক্ষা শেষ। এতে আমাদের অনেকে শঙ্কায় পড়েছে। কারো আগের পরীক্ষা ভালো হয়নি, কেউ ভাবছে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেবে। সবমিলে খারাপ একটি নজির তৈরি হচ্ছে। 

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমাদের ফলাফল এখনো অ্যানালগ পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়। অথচ পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল সিস্টেমে ফল প্রকাশ হচ্ছে। দক্ষ আইসিটি সেল এবং প্রশাসনের সঠিক দিকনির্দেশনায় ডিজিটাল সিস্টেমে ফল প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ৩য় ও ৪র্থ সেমিস্টারের রেজাল্ট হয়নি। অথচ ৫ম সেমিস্টারের মিডটার্ম ১৩ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। একাধিক শিক্ষার্থী বিভাগের কোর্স কো-অর্ডিনেটর এবং চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। 

ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতার কারণ হিসেবে করোনাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, করোনার প্রভাবেই এমনটি ঘটেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রেজাল্ট দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। 

তবে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আইন বিভাগসহ সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অনুষদের প্রায় সবগুলো বিভাগ সঠিক সময়ে ফলাফল প্রকাশ করেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আকরাম হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা অনলাইনে পরীক্ষা নেইনি। পরে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে অফলাইনে নিয়েছি। এ কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এছাড়া আমাদের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান কিংবা অন্যান্য শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত। সবমিলে কয়েকটা ফলাফল দিতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে রমজানের আগে সব রেজাল্ট দিয়ে দেব।

আরবী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাদির বলেন, এক সেমিস্টারের ফলাফল শেষে আরেক সেমিস্টার শুরু করাই নিয়ম। কিন্তু কোভিডের কারণে এটি ব্যাহত হচ্ছে। যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে সেগুলোর খাতা দেখতে সময় লাগে। এছাড়া সবার নম্বর জমা না হলে টেবুলেশন তৈরি করা যায় না। তাই দেরি হচ্ছে। দেরিটা ইচ্ছে করে হচ্ছে না। সকল সেমিস্টারের পরীক্ষা কমিটিকে ডেকে এ সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব রেজাল্ট রেডি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোশারফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, পরীক্ষা কমিটির সভাপতির স্ত্রী অসুস্থ, সদস্যদের একজন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তাই ফলাফল প্রস্তুত করা যায়নি। ছাত্ররা আমাকে বিষয়টি জানানোর পর পরীক্ষা কমিটিকে অনুরোধ করেছি। রেজাল্ট জমা হয়ে গেছে, শিগগিরই প্ৰকাশ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিয়ম হচ্ছে ফলাফল প্রকাশ সাপেক্ষে পরবর্তী সেমিস্টার কিংবা বর্ষের ক্লাস শুরু করা। এখন আমরা ৪ মাসে সেমিস্টার এবং ৮ মাসে বর্ষ শেষ করার পরিকল্পনা করেছি। এজন্য অনেক ডিপার্টমেন্টের পক্ষে পরীক্ষা নেওয়া এবং যথা সময়ে ফলাফল প্রকাশ করা কঠিন হয়ে উঠছে। সেমিস্টারজট ঠেকাতে রেজাল্ট প্রকাশের আগেই পরের সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করা হচ্ছে। 

টানা দুই সেমিস্টার ফলাফল না দিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, আমার তথ্য সংগ্রহ করছি। আটকে থাকা ফলাফল দ্রুত প্রকাশের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

এইচআর/এইচকে