মোবাইল ফোনে ছবি তুলেই একজন কৃষক জানতে পারবেন মাটির ধরন ও প্রকৃতি। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এটি এখন বাস্তব। গবেষণাগারে পরীক্ষার ঝামেলা ছাড়াই মাটি পরীক্ষার সহজ এ প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেছবাহ উদ্দিন এবং অধ্যাপক ড. মো. রাকিব হাসান। 

সম্প্রতি স্প্রিঞ্জার কর্তৃক প্রকাশিত কমপ্লেক্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমসে (গবেষণা প্রকাশের ওয়েবসাইট) নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন কৃষক তার আবাদি জমিতে কি কি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব, তা জানতে পারবেন খুব সহজেই। এর ফলে গবেষণাগারে মাটি পরীক্ষায় সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে কৃষকের।

জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) অর্থায়নে এক বছর মেয়াদি এ গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হয়। 

গবেষকরা বলেন, গবেষণার আগে আমরা মাথায় রেখেছিলাম কীভাবে একজন কৃষক সহজে জানতে পারবে তার আবাদি জমির মাটির ধরন কেমন। এতে সঠিক মাটিতে সঠিক ফসল চাষ করতে পারবে কৃষকরা। এখন শ্রমিক, কৃষক সবাই মোটামুটি মানের স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। তাই আমরা একটি মোবাইল এপ্লিকেশন তৈরির লক্ষ্যে একটি মেশিন লার্নিং মডেল ডেভেলপ করেছি। মোবাইল ফোনে তোলা ছবি দিয়ে সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমরা জানতে পারব যে ওই মাটি কোন ধরনের। আমাদের সফটওয়্যারে ৮ ধরনের মাটির ৩৮ হাজারের বেশি ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ৮ ধরনের প্রত্যেক মাটির ৭৬টি করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে ডাটা অগমেন্টেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩৮ হাজার ৯১২টি নমুনা তৈরি করা হয়েছে।

ফোন দিয়ে একটি মাটির উপরিভাগের ছবি তোলার পর মেশিন লার্নিং মডেল ব্যবহার করে এ ডাটাগুলো বিশ্লেষণ করে মাটিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এখানে শুধু মাটির উপরিভাগের ছবি তুলে মাটির ধরণ শনাক্ত করা যাবে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রায় ৯৮-৯৯ শতাংশ সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব। 

গবেষকরা আরও বলেন, এটি প্রাথমিকভাবে শুধু মাটির ধরন শনাক্ত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ প্রযুক্তির সঙ্গে আবহাওয়ার পরিস্থিতি, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, সেচ ব্যবস্থাপনার সময় যুক্ত করে পরবর্তীতে স্মার্ট রিকমেন্ডেশন সিস্টেম ডেভেলপ করা হবে। অর্থাৎ এ সিস্টেমের মাধ্যমে কোন সময়, কোন মাটিতে, কোন ফসলগুলো ভালো হবে তা নির্ণয় করার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। 

এতে কৃষকরা মাটি শনাক্তের পাশাপাশি ওই মাটিতে কোন ফসল উৎপাদন করে লাভবান হবে, সেটাও জানতে পারবেন। এতে উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এর মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষিও অনেক উন্নতি সাধন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছন গবেষক দল। পরবর্তীতে, সম্পূর্ণ সিস্টেমটি কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী করে মোবাইল অ্যাপস আকারে রিলিজ দেওয়া হবে। 

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/এমএএস