চার শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা নদীবন্দর অবরুদ্ধ রাখার পর প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে রাত ৮টার দিকে বরিশাল নদীবন্দরে টোলের টিকিট জালিয়াতি করার প্রতিবাদ করায় চার শিক্ষার্থীকে মারধর করে বন্দরের কর্মচারীরা।

বর্তমানে নদীবন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের অ‌তি‌রিক্ত উপ-ক‌মিশনার ফজলুল ক‌রিম। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা ঘটিয়েছে বন্দর কর্মচারীরা। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করার পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট। তারা ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ জানান, তিতুমীর কলেজের এক বন্ধুকে আমরা কয়েকজন মিলে বরিশাল নদীবন্দরে এগিয়ে দিতে আসি। আমরা নদীবন্দেরের কাউন্টারে জানাই, একজন ঢাকা যাবে। তার টিকিট সংগ্রহ করেছি। বাকি তিনজন যাব না। কিন্তু কাউন্টার থেকে আমাদের চারজনের টিকিট সংগ্রহ করতে বাধ্য করেন। টিকিট সংগ্রহ করার পরে তা নদীবন্দর কর্মচারীরা না ছিঁড়ে পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন। আমরা তখন জানতে চাই, সরকারি বিধান মতে টিকিট ছিঁড়ে ফেলার কথা কিন্তু কেন ছিঁড়ছেন না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ৭-৮ জন আমাদের আটকে মারধর করেন।

শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, মারধরের একপর্যায়ে আমাকে ও আরিফকে নদীবন্দরের দোতলায় কর্মকর্তাদের কক্ষে নিয়ে আটকে মারধর করে। কান ধরিয়ে ওঠবস করান। আমাদের মোবাইল, মানিব্যাগ রেখে দিয়ে পাঠিয়ে দেন। বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের জানাই এবং আমাদের মারধরের ঘটনার বিচার দাবিতে নদীবন্দরে আন্দোলন করি।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত হাসান রক্তিম বলেন, নদীবন্দর কর্মচারীরা কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছিল। এর প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের অমানবিক নির্যাতন চালায়। আমরা আন্দোলন করার অনেকক্ষণ পরে পুলিশ প্রশাসন অভিযুক্ত একজনকে উপস্থিত করতে সক্ষম হন। অভিযুক্ত প্রক্টর স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া কোনো মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন না।

নদীবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিটিএর যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় টোল গার্ড মাইনুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। এমনকি ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা নদীবন্দরে তাদের কার্ড দেখালে কোনো টোল দিতে হবে না।

তিনি আরও বলেন, নদীবন্দরে কর্মরত কিছু কর্মচারী যাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসছেন। তারা টিকিট সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখে যারা এ ধরনের বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করব।

যদিও অভিযুক্ত টোল গার্ড মাইনুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যায় আ‌মি গিয়ে দে‌খি কাউন্টারের স্টাফ জা‌কিরের সঙ্গে বিশ্ব‌বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মারামা‌রি চলছে। এরপর সবাইকে নিয়ে ওপরে আসি। পরে ওদের বু‌ঝিয়ে আ‌মি পা‌ঠিয়ে দিয়ে‌ছি। আমার সঙ্গে কারো ঝামেলা হয়‌নি। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছাত্রদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছি।

ব‌রিশাল বিশ্ব‌বিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নদীবন্দর কর্মচারীরা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। নদীবন্দর কর্মকর্তা আশ্বস্ত করেছেন আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করবেন। এছাড়া ছাত্রদের টোলমুক্ত ঘোষণা করেছেন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি