রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শেরে-ই-বাংলা হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে হলে থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগের এক নেতা। গতকাল সোমবার (১১ এপ্রিল) রাতে ওই শিক্ষার্থীকে সিট ছেড়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দিলেও সিট না ছাড়ায় আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে হল থেকে তার জিনিসপত্র বারান্দায় ফেলে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী বর্তমানে একটা পরিত্যক্ত কক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। 

এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে-বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের সদ্যঘোষিত কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল। 

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম আকিব জাভেদ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি হলটির ১২৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা আকিবের বাবা নেই। 

এদিকে আকিবকে নামিয়ে তার কক্ষে তৃতীয় বর্ষের কমর কুমার পাল নামে অনাবাসিক এক শিক্ষার্থীকে ওই সিটে তুলে দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আকিব বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে হল ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান আমার রুমে আসেন এবং বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আজ সকাল ৯টার মধ্যে রুম ছেড়ে চলে যেতে সময় বেধে দেন। আজ সকালে তিনি আবার আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে ৭/৮ জন মিলে আমার বইপত্রসহ সব জিনিস বাহিরে ফেলে দেয়। কিন্তু আমার কোনো যাওয়ার জায়গা নেই। এমতাবস্থায় আমি নিরাপত্তাহিনতায় ভুগছি।

ঘটনাটি হলের প্রাধ্যক্ষকে জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে প্রাধ্যক্ষ স্যার এসে ঘটনাটি শুনেছেন এবং আমাকে একটি অপরিত্যাক্ত কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু বরাদ্দকৃত রুমে থাকতে চান বলে জানান এ শিক্ষার্থী। 

হল সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারির প্রথম দিকে আবাসিকের জন্য আবেদন নেয় হল প্রশাসন। তারপর মৌখিক পরীক্ষা হয় ফেব্রুয়ারিতে। মার্চের প্রথমে হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ১২৯ নম্বর কক্ষে ওঠেন আকিব। ওই বেডে ২০১৫-১৬ সেশনের এক শিক্ষার্থী আরও এক মাস ছিলেন। পরে তিনি ৮ এপ্রিল চলে যান। পরে এই বেডে ওঠেন আকিব।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল বলেন, আমি কাউকে হল থেকে বের করে দিয়নি। আকিব নামে ছেলেটি অন্য এক রুমে বেড শেয়ার করে থাকতেন। ১২৯ নম্বর রুমে আশিক নামে এক ছেলে থাকতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর হঠাৎ আকিব এই রুমে চলে আসেন। এদিকে রুমে থাকা আশিক যাওয়ার পর সিনিয়রের ভিত্তিতে ওই সিটে কমল থাকবেন বলে নিশ্চিত করা হয়।

তার বেডপত্র বের করে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আকিব যে হলে অবস্থান করছেন সেটা হল প্রাধ্যক্ষও জানেন না। আমি তার জিনিসপত্র বের করে দেয়নি। হয়তো যে তার সিটে উঠেছে (কমল) সে তার জিনিসপত্র বারান্দায় রাখতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুকে বারবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মো. হবিবুর রহমান বলেন, আজ সকালে বিষয়টি জেনে সেখানে গিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি। সব শুনে আপতত তাকে অন্য একটি রুমে থাকার ব্যবস্থা করেছি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

তিনি আরও জানান, ঘটনাটি গতকাল ঘটেছে। কিন্তু ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হল প্রশাসনকে কিছুই জানায়নি। তবে তার ঐ সিটে বরাদ্দ রয়েছে। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থীকে হলের রুম থেকে কেউ বের করে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

মেশকাত মিশু/আরআই