বিশ্ব মা দিবস আজ। জন্মের পরে যার সঙ্গে সন্তানের সবচেয়ে বেশি মিতালি, সন্তানের সবচেয়ে বেশি আপন তিনি মা। বার্ট্রান্ড রাসেল তার ‘ম্যারিজ অ্যান্ড মোরালস’ বইয়ে বলেছেন, মাতৃত্ব সহজাত প্রবৃত্তি, পিতৃত্ব সহজাত নয়। সেজন্য প্রকৃতির কিছু ব্যতিক্রম বাদে সর্বত্র দেখা যায় সন্তানের জন্য মায়েরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করেন না।

জন্মদাত্রী মা, যার কল্যাণে পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখে সন্তান। সেই মায়ের স্মরণে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘বিশ্ব মা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যদিও মাকে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা জানাতে কোনো দিনক্ষণ লাগে না, তবুও মাকে গভীর মমতায় বিশেষভাবে স্মরণ করার দিন আজ।

এবারের মা দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ঢাকা পোস্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আমজাদ হোসেন হৃদয়।

মাকে নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, চারদিক যখন অন্ধকার অমাবস্যায় আচ্ছন্ন, পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া মানুষগুলো যখন হঠাৎ বিলীন। স্বার্থপরতা ও বিশ্বাসঘাতকতা যখন চরমে, তখন নিঃস্বার্থে একমাত্র ভরসার প্রতীক ও ঢাল হয়ে দাঁড়ায় যে সে মা। সব ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে যে মানুষটি বটবৃক্ষের ন্যায় অবিচল ছায়ার মতো আগলে রাখে সেই ‘মা’ শব্দটির প্রকৃত অর্থে কোনো সংজ্ঞা হয় না, কোনো দিবস হয় না। পৃথিবীর সব মায়েরা ভালো থাকুক, মা ও সন্তানের বন্ধন সুদৃঢ় হোক, সব বৃদ্ধাশ্রম বিলীন হয়ে যাক।

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহান ইশরাক বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দ ‘মা’। পুরো শব্দেই যেন প্রকাশ পায় আবেগ আর অনুভূতির তীব্র উপস্থিতি। যত দিন যায়, যতই বড় হই না কেন, আমাদের অস্তিত্বজুড়ে এই শব্দটির বিচরণ ঠিক ছেলেবেলার মতোই থেকে যায়। পড়াশোনার কারণে বাইরে থাকা হয়। অনেক দিন পর পর বাসায় আসি। বাসায় এলেই মনে হয় আম্মুর কাছে আমি যেন স্কুলপড়ুয়া সেই ছোট্ট ছেলেটি। পৃথিবীর সবার কাছে বয়সে, আচরণে, অভিজ্ঞতায় বড় হলেও আম্মুর কাছে কখনোই বড় হতে পারিনি। এখনো বাইরে গেলেই আম্মুর দুশ্চিন্তা, পথে কোনো বিপদ হয় কি না। অথচ এই আমি-ই একা একা থাকতে পারি, ঘুরতে পারি, চলতে পারি। সে কথা আম্মুকে বোঝাই কি করে। মাঝে মাঝে ভাবি, বোঝানোর দরকার-ই বা কি। সবার কাছে তো বড় হয়েই যাচ্ছি, আম্মুর কাছে না হয় আগের আমি-ই থাকি, সেই ছোট্টবেলার মতো।

সবকিছুর পেছনে মায়ের অবদানই বেশি উল্লেখ করে নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী স্মৃতি আফরোজ সুমি বলেন, আমার মা আমার কাছে আস্ত একটা স্তম্ভ, তাতে পরজীবীর মতো বেড়ে ওঠা ছোট্ট একটা লতা আমি। মা ভেঙে পড়লে আমি কীভাবে সবকিছু ধরে রাখতে পারি? আমি আজ যা তার পেছনে আমার মায়ের যে অবিরাম সমর্থন, রাত জাগা অক্লান্ত পরিশ্রম— এর জন্য তাকে ধন্যবাদ দেওয়াটা খুবই তুচ্ছ। তবুও মা দিবসে মা তোমাকে বলতে চাই— ধন্যবাদ মা, আমার জন্য যা কিছু করেছ সবকিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি যেমন কোনো স্বার্থ ছাড়া আমাকে ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছ, আমিও তোমাকে তেমন করেই ভালোবাসতে চাই।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম সাকাপি বলেন, যখন পুরো পৃথিবী আমার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে, কেবল আপনি বিশ্বাস রেখেছিলেন। কেবল আপনিই মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলেন আমি পারব। রাতের পর রাত পাশে বসে সাহস জুগিয়েছেন। শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন, কেবল আমার সুন্দর জীবনের জন্য। আমার সব সফলতার অনুপ্রেরণা আমার মা। যে দিন প্রথম ক্যাম্পাসে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন, আমি ভেবেই নিলাম এই পৃথিবীতে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য হয় না। ধন্যবাদ আম্মু। ভালোবাসি।

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী তাজিনুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনযাত্রার উন্নয়নের মানের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের মান ক্রমশ ব্যস্তানুপাতিক হারে পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে একজন মানুষের যে মানবিক মানুষ হওয়া প্রয়োজন— এই উপলব্ধি থেকে সে অনেক দূরে সরে এসেছে। একটা সময় মা-বাবা আমাদেরকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাদের জীবন পর্যন্ত বাজি ধরেছেন। অথচ আজ আমরা মা-বাবার সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করছি কারণে অকারণে, যা অনুচিত। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন- ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, যদিও মাকে ভালোবাসার জন্য বাধ্যতামূলক কোনো দিবসের প্রয়োজন নেই তবুও আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মা দিবস সম্পর্কে বলতে চাই— পৃথিবীর সব মা যেন তার সন্তানের সঙ্গে সুখে-শান্তিতে থাকেন। কোনো মায়ের স্থান যেন আর বৃদ্ধাশ্রমে না হয়। মা দিবসে সব মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি।

এইচআর/এসএসএইচ