২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে প্রথম ও ‘খ’ ইউনিটে ৩৬তম হয়েছিলেন রাফিদ হাসান সাফওয়ান। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

এ ছাড়া জেডিসি, দাখিল ও আলিম পর্যায়েও জিপিএ–৫ পেয়েছেন সাফওয়ান। তার এসব সফলতার পেছনে জন্মদাত্রী মা-ই সবচেয়ে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। তার ভাষ্য, ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে তুলনামূলক খারাপ হওয়ার পর আমি আম্মুকে সবচেয়ে বেশি কাছে পাই। সেসময় আম্মু সবচেয়ে বেশি মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছিল। যার ফলাফল পরবর্তীতে ‘ঘ’ ইউনিটে প্রথম হই। এছাড়াও জীবনের শুরু থেকেই মা সবসময় উৎসাহ যুগিয়েছেন।

রোববার (৮ মে) মা দিবস উপলক্ষে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এসব অভিমত ব্যক্ত করেন সাফওয়ান।

তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার চাটখিল পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের হীরাপুর আলিম মাদরাসার আরবি প্রভাষক মাওলানা রাকিব উদ্দিনের ছেলে। মা হোমিও চিকিৎসক কামরুন নাহার। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাফওয়ান বড়। তিনি ২০১৯ সালে রাজধানী ডেমরার দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল এবং একই মাদরাসা থেকে ২০২১ সালে আলিম পাস করেন।

মা-কে নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করে সাফওয়ান বলেন, আমাদের মাথার উপর কিছু ছায়ারূপ মানুষ থাকে। এ ছায়াগুলো আমাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সবসময় আগলে রাখে। তাদের উপস্থিতিটা আমরা সবসময় বুঝতে পারি না, কিন্তু সে ছায়াগুলো সরে গেলেই তাদের অভাব আমরা টের পাই। আমার আম্মু হচ্ছেন এমন একটি ছায়া। তার ভালোবাসা ও দোয়া সবসময় আমাকে আগলে রাখে। আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে মা-ই অন্যতম প্রভাবক।

সাফওয়ান বলেন, ছোটবেলা থেকে আব্বু-আম্মু উভয়কেই অনেক পড়তে দেখেছি। আমাদের বাসায় নিয়মিত পত্রিকা রাখা হতো। সেখান থেকেই পড়াশোনার প্রতি আমার অদম্য আগ্রহের সূচনা। যখন আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়নি, তখন থেকেই অক্ষর ধরে ধরে পত্রিকার গল্প পড়ার চেষ্টা করতাম। মূলত আম্মুই এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। তাছাড়া ছোটবেলায় আম্মুকে দেখেছি, হোমিওপ্যাথি কলেজে পড়াশোনার জন্য প্রায়ই নোয়াখালী থেকে কুমিল্লা যাওয়া আসা করতেন। এসবই আমাকে পরোক্ষভাবে পড়াশোনার প্রতি প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

খারাপ সময়ে মা মানসিক সাপোর্ট দিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাবি ‘খ’ ইউনিটে পরীক্ষা তুলনামূলক খারাপ হওয়ার পর আমি আম্মুকে সবচেয়ে বেশি কাছে পাই। সে সময় আব্বু-আম্মু উভয়েই যেভাবে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছিল, সেসবের কথা ভাবলে আমার তাদের প্রতি বুকভরা কৃতজ্ঞতা চলে আসে। ওই পরীক্ষার পর আম্মু বারবার সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলতেন, একটা পরীক্ষা তো খারাপ হতেই পারে। আরও পরীক্ষা বাকি আছে। চেষ্টা করার দায়িত্ব তোমার, সফলতা তো আল্লাহর কাছে।

সাফওয়ান আরও বলেন, আম্মুর কর্মস্পৃহা দেখলে আমার নিজের প্রতি নিজের লজ্জা হয়। আম্মু আমাদের পরিবারের সবার খোঁজখবর রাখেন, গৃহস্থালি কাজ একাই সামাল দেন আবার হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিস করেন ও মহিলাদের মাঝে তালিমের কাজ করেন। দিনশেষে আবার নিয়ম মাফিক বই নিয়ে পড়তে বসেন। আম্মু এখনো নিয়মিত আমার পড়াশোনার খোঁজখবর রাখেন। শুধু পড়াশোনা নয়, আমার ধর্মীয় দিকেও উনি অনেক গুরুত্ব দেন।

মায়ের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে সাফওয়ান বলেন, আম্মুকে প্রায়ই ভালোবাসার কথা বলতে ইচ্ছা করে। কিন্তু সংকোচের কারণে কখনোই বলা হয়ে উঠে না। তবে সবসময় আম্মুর জন্য দোয়া থাকে ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগিরা’। আজ বলছি আম্মু তোমাকে বড্ড ভালোবাসি।

নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে সাফওয়ান বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়ছি। বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। এটা একজন আইনজীবী হিসেবে হোক, কিংবা একজন ন্যায়বিচারক বা একাডেমিয়াতে কাজ করে। আম্মু-আব্বুর স্বপ্ন পূরণ করতে আমি বদ্ধ পরিকর।

এইচআর/আইএসএইচ