ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে নীল দলের প্যানেলে মনোনয়ন পেয়েছেন যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক।

ওই দুই শিক্ষক হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আকরাম হোসেন এবং লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) নির্বাচনে দলগুলোর মনোনীত প্যানেল জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দল এবং বিএনপি সমর্থিত সাদা দল তাদের ৩৫ সদস্যের মনোনীত প্যানেল রেজিস্টার কার্যালয়ের নির্বাচন শাখায় জমা দেয়।

একটি সূত্রে জানা গেছে, নীল দলের তালিকায় আছেন অধ্যাপক আকরাম হোসাইন ও অধ্যাপক মিজানুর রহমান। এ দুজনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ জমা আছে। সেই অভিযোগগুলোর এখনো মীমাংসা হয়নি। 

অধ্যাপক আকরাম হোসাইনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ৬ষ্ঠ ব্যাচের এক ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে সম্প্রতি ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগের আগে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আকরাম হোসাইন তাকে নিয়োগের বিনিময়ে ‘অনৈতিক’ ও ঘৃণ্য প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি না হলে তখন তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়োগটি সাময়িক স্থগিত করে সিন্ডিকেট। একইসঙ্গে অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠানো হয়।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন অধ্যাপক আকরাম। তিনি বলেন, এটা আসলে নির্যাতনের অভিযোগ নয়; এটা চাকরি না পাওয়ার অভিযোগ। যদি তার সিলেকশন হতো, তাহলে সে এ অভিযোগ করত না।

আরেক অভিযুক্ত অধ্যাপক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) নারী সহকর্মীদের হেনস্তা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ ও উপদেষ্টা ছিলেন। গত বছরের ২২ নভেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে ড. মিজানের বিভিন্ন অনিয়ম ও যৌন হয়রানি নিয়ে নিটারের ৩৭ জন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দেন।

তবে সে সময় ড. মিজানুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে জানান। তিনি বলেন, 'এগুলো উদ্দেশ্যমূলক। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য এসব করা হয়েছে।'

নীল দলের শিক্ষক প্যানেলের ৩৫ সদস্যের মধ্যে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুস সামাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে কিন্তু প্রমাণিত হয়নি। তাই আমরা তাদের রেখেছি। অভিযোগ যে কেউ করতে পারে। নির্বাচিত হওয়ার পর যদি অভিযোগটি প্রমাণিত হয় এবং শাস্তি হয় তাহলে তখন তারা শিক্ষক প্রতিনিধি থাকবেন না।

নীল দলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে সেটা তদন্তাধীন। এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

আগামী ২৪ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ মে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। এর মধ্যে কোনো দল চাইলে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সাধারণত কোষাধ্যক্ষ নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এইচআর/এসকেডি