নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট গত ১৩ মে ‘ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের সাবেক দুই ডিনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। ১৫ মে ওই সংবাদের প্রতিবাদ জানান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রহমান। 

তবে সেই প্রতিবাদলিপিতে অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. রহমান কোনো ব্যাখ্যা দেননি। পরে ১৯ মে অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে আরেকটি প্রতিবাদলিপি পাঠান তিনি। দ্বিতীয় প্রতিবাদলিপিতে তিনি যা বলেছেন, তা হুবহু তুলে ধরা হলো। 

আপনার পত্রিকায় এক বেনামি চিঠির সূত্র ধরে ফার্মেসি অনুষদের দুজন অধ্যাপককে নিয়ে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যমূলক ও মানহানিকর। কোনো তথ্যের ন্যূনতম সঠিকতা যাচাই না করে একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বেনামি চিঠির বক্তব্য এভাবে জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে আপনি ও আপনার পত্রিকার সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার আমিসহ অন্য দুজন অধ্যাপককে ভীষণভাবে মানহানি করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে গত ১৫ মে একটি প্রতিবাদ লিপি আপনার পত্রিকার সম্পাদককে দেওয়ার পর তা উক্ত দিন প্রকাশ করেছেন বিধায় ধন্যবাদ। কিন্তু সেখানে প্রতিবেদকের বক্তব্যে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করা হয়। অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বিধায় এর সবিস্তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র প্রতিবাদ করা হয়েছে। তদুপরি যেহেতু আপনি ব্যাখ্যা চেয়েছেন তার ব্যাখ্যা নিম্নে দেওয়া হলো।

১। টাকা আত্মসাৎ বিষয়ে যে অভিযোগটি এসেছে, তা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা হয়। যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি মামলা হয় ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়নি।

২। বেনামি চিঠিতে ব্যাক ডেট দিয়ে সই করে ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের মিথ্যাচার করা হয়েছে, যা একেবারেই কাল্পনিক। উল্লেখ্য, আমি দায়িত্ব হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গেই সমস্ত অ্যাকাউন্ট ও চেক বই নতুন ডিনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। টাকা আত্মসাতের প্রশ্নই উঠে না। এ ব্যাপারে কারও কোনো সন্দেহ থাকলে বর্তমান ডিন ও আমাকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞেস করলেই তার প্রমাণ হবে।

৩। ডিন মহোদয়কে অভিযুক্তদের ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে আমি কোনো ধরনের কথা বলেছি কি না তা তাকে জিজ্ঞেস করলেই পাবেন। আমি বরাবরই দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার পক্ষে এবং বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে মূল ঘটনা তদন্তের জন্য বলেছি।

৪। স্যানিটাইজার প্রস্তুতিতে কোনো কোম্পানির কাছ থেকে একটি টাকাও নেওয়া হয়নি। স্যানিটাইজার তৈরিতে আমার বেশ কয়েকজন ফ্যাকাল্টি যুক্ত ছিলেন। তাদের জিজ্ঞেস করলেই বুঝতে পারবেন। তাতেও বিশ্বাস না হলে নাম করা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি স্কয়ার, বেক্সিমকো ও ইনসেপ্টাসহ যে কোনো ফার্মাসিউটিক্যালকে জিজ্ঞেস করেন, তারা অর্থ দিয়েছে কি না? আমাদের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির শিক্ষকদের উঠানো টাকা ও ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে বিনামূল্যে স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়, যা প্রশংসিত হয়েছে।

৫। আমার ঢাকার বাড়ি ও বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে তথ্য প্রদান করা হয়েছে। ২ দশমিক ৫ কাঠার উপর নির্মিত আমাদের বাড়িটি ডিন হওয়ার আগেই নির্মিত হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ১০ বছর বিদেশে ছিলাম এবং আমার দু-ভাই কানাডায় চাকরিরত ছিল ও আছে। এমতাবস্থায়, ২ দশমিক ৫ কাঠার ওপর একটি ছোট বাড়ি থাকা অস্বাভাবিক নয়। আর আমার বিলাসবহুল গাড়িটি হলো ২০০৭ সালে ক্রয় করা একটি জীর্ণ এক্স-করোলা গাড়ি, যা আমি গত পাঁচ বছর ধরে নিজেই ড্রাইভ করে চলছি।

৬। গত ১৭ মে প্রকাশিত আপনার পত্রিকার একটি সংবাদে একটি উকিল নোটিশের সূত্র ধরে বলা হয়েছে যে, আমার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে, বিষয়টি সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে ফার্মেসি অনুষদে অর্থ চুরির বিষয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারপূর্বক তদন্তের জন্য একটি মামলা আছে।

একটি তদন্তাধীন বিষয়ে অতি উৎসাহী হয়ে এ ধরনের ভুয়া, বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসূত সংবাদ প্রচার করে জাতির শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা ফার্মেসি অনুষদকে কলঙ্কিত করেছেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এ ধরনের স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে সব তথ্য না জেনে এরূপ প্রতিবেদন করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। আগামী ২৪ মে অনুষ্ঠিতব্য সিনেট নির্বাচনে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি মহল লিপ্ত আছে।

গণমাধ্যমের কাছ থেকে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য। কিন্তু এভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষকদের হেয় প্রতিপন্ন করা চরম অন্যায়। বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ সংবাদের সংশোধনীসহ আমার প্রতিবাদলিপি আপনার বহুল প্রচলিত পত্রিকায় প্রকাশের অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় আমি এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হব।

এইচআর/আরএইচ