‘আমাদের সমাজে নাচের বিষয়টি ভালোভাবে দেখা হয় না’
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবিতে) ছয় ছাত্রী ‘বারসো রে মেঘা মেঘা’ হিন্দি গানের তালে নেচে ভাইরাল হয়েছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যধারা ড্যান্স ক্লাবের সদস্য। সম্প্রতি নৃত্যধারা ড্যান্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোখসানা রহমান রিমি নাচের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে পোস্ট করেন। পরে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি নাচের এমন চর্চা নিয়ে জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বেশ প্রশংসিত হচ্ছেন ওই শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ২০১৯ সালের শুরুতে মাভাবিপ্রবির ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রোখসানা রহমান রিমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃত্যধারা ড্যান্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ওই ক্লাবে বর্তমানে ৫৪ জন সদস্য রয়েছেন। রিমি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আব্দুর রহমানের মেয়ে।
নাচে অংশগ্রহণকারী অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী শাহনাজ সুলতানা রুবি, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী মাইমুনা জীবন একান্ত, পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী শাওলী ইসরাত, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী ইসরাত ফারজানা অপু, গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষ ও প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী সুমাইয়া খান স্মৃতি।
বিজ্ঞাপন
তাদের নাচের ভিডিওগ্রাফির কাজ করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ সৌরভ। ক্যাম্পাসের প্রধান গেট, প্রত্যয় ৭১, বুদ্ধিজীবী চত্বর, কৃষ্ণচূড়া লেন, একাডেমিক কাম রিসার্চ ভবন, ২য় একাডেমিক ভবনে নাচের ভিডিওটি ধারণ করা হয়। ভিডিও ধারণে ব্যবহার করা হয় ড্রোন ক্যামেরা।
নৃত্যধারা ড্যান্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ সুলতানা রুবি বলেন, আসলে নাচের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার জন্য করিনি। যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম তখন থেকেই নাচের প্রতি ঝোঁক ছিল। ভার্সিটিতে শুরু থেকেই নিয়মিত কালচারাল প্রোগ্রাম করি। আর ডিপার্টমেন্টেটা কালচারাল মনোভাবের। ক্লাসের শিক্ষক/শিক্ষিকারা শুরু থেকেই আমাদের সহযোগিতা করেন। এর আগে দেশের ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতায় আমরা রানারআপ হয়েছিলাম। ভিডিওটি মানুষজন খুবই ভালোভাবে নিয়েছে। যে কারণে হয়তো ভাইরাল হয়েছে। পড়াশুনা শেষে চাকরি নিলেও নাচটা নিয়মিতই করে যাব।
নৃত্যধারা ড্যান্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রোখসানা রহমান রিমি বলেন, আমার ড্যান্স পার্টনারদের সহযোগিতায় ওই গানের নৃত্যের ভিডিওটি করতে চার ঘণ্টা সময় লেগেছিল। ছোট বেলা থেকেই নাচ আমার প্যাশন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ড্যান্স ক্লাব ছিল না। উদ্যোগ নিয়ে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারিতে নৃত্যধারা ড্যান্স ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করা হয় সহপাঠীদের নিয়ে। বেশ কয়েকটি ন্যাশনাল ড্যান্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিচিতি বৃদ্ধির লক্ষে ‘বারসো রে মেঘা মেঘা’ হিন্দি গানে নৃত্য করে সেটি ফেসবুকে পোস্ট করার পরই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। তবে আশা করিনি এতো ভিউ হবে ভিডিওটি। এর আগে নাচের ভিডিওটি করতে সপ্তাহখানেক আগে থেকে সবাইকে নিয়ে অনুশীলন করি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের সব ধরণের সহযোগিতা করেছেন। আমাদের সমাজে নাচের বিষয়টি ভালোভাবে দেখা হয় না। নাচের প্রোগ্রাম করা খুবই কঠিন। অনেকেই নেতিবাচকভাবে দেখেন। মেয়েরা নাচানাচি করছে। অনেকের পরিবারভিত্তিক সমস্যা থাকে। মেয়ে বড় হয়েছে নাচবে কেন। মানুষের সামনে নাচবে কেন- এই বিষয়গুলো খুবই কষ্ট দেয়।
মাভাবিপ্রবির ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম বলেন, ভাইরাল হওয়া নাচের ভিডিওটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যধারা ড্যান্স ক্লাবের সদস্যরা করেছে। তারা বিগত ৪/৫ বছর ধরে নৃত্যধারার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক গতিশীলতা এনেছে। বাংলাদেশের নৃত্যের ঐতিহ্য সেটা তারা তুলে ধরার চেষ্টা করে। সংগঠনটি প্রথম থেকেই আমরা প্রচার করার চেষ্টা করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক শিক্ষার বাইরে শিক্ষার্থীদের বাড়তি কার্যক্রম হিসেবে নাচ, গান, আবৃত্তি ও খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করি। শিক্ষার্থীদের পূর্ণ বিকাশের জন্য এটি খুবই সহায়ক।
অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর