ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্লাবে মধ্যরাত পর্যন্ত বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অবস্থান করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, রোববার (১৯ জুন) রাতে ক্লাবের সভাপতি বিএনপি সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষক ও সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলামের আমন্ত্রণে রুহুল কবির রিজভী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে যান। সেখানে রাত ১টা পর্যন্ত তিনি অবস্থান করেন। এ সময় রিজভীর সঙ্গে তার স্ত্রী এবং কয়েকজন বন্ধু ছিলেন।

তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও নীল দলের সিনেট সদস্য অধ্যাপক আব্দুর রহীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা সোমবার ক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের মিটিং করি। সেখানে ক্লাবের সভাপতির কাছে মৌখিক ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ক্লাবের অনেক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এখানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবং জনমনে উৎকণ্ঠা তৈরি হওয়ায় প্রকৃত সত্য উদঘাটনে ক্লাবের সহ-সভাপতি ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছারকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত  কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে ক্লাবের কার্যকরী পরিষদ। কমিটিতে নীল দল এবং সাদা দলের দুইজন করে শিক্ষক আছেন বলে জানান অধ্যাপক আব্দুর রহীম।

এ বিষয়ে অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, রাতে ক্লাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অতিথিরা আসেন। খাওয়া-দাওয়া করেন। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ক্লাবের সভাপতি। আমার আমন্ত্রণেও রিজভীসহ কিছু অতিথি এসেছিলেন। কেউ গোপন বৈঠক করতে কি ক্লাবে আসবে? কোনো বৈঠক করা হয়নি। সাধারণ আড্ডা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ আছে এবং অতিথিরা তাদের স্ত্রীদের নিয়ে এসেছিলেন। কেউ যদি গোপন বৈঠকের পরিকল্পনা নিয়ে আসে তাহলে কি স্ত্রীদের নিয়ে আসবেন? আমরা যখন ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন অন্য রুমে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরাও ছিলেন। রাতে ক্লাবে এ রকম অতিথি সব শিক্ষকেরই আসে। আমরা তো কখনো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি? কেন তুলব? এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। মূলত হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২২ জুন) এ বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ইউট্যাবের একটি ঘরোয়া দাওয়াতে আমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও তিনজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলাম। আমন্ত্রিত অতিথিসহ সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ জন উপস্থিত ছিলেন। এখানে যদি নাশকতার কোনো পরিকল্পনা করা হতো, তাহলে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার মধ্যে কীভাবে আমরা ডাইনিং কক্ষে গিয়ে বসলাম। সেখানে অনেকেই সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। এটিকেই এখন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং তাদের দল দাস কিছু শিক্ষক।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি এবং সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বন্যা মোকাবিলায় ব্যর্থতা, প্রচণ্ড মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্য হু হু করে বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে সরকার বিরোধী দলের সমালোচনাকে দমন করার লক্ষ্যে দলবাজ কিছু শিক্ষক ও মিডিয়ায় নাশকতার অপপ্রচারের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই নাটক শুরু করেছে।

এইচআর/এসকেডি