পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা  হয়েছে। বুধবার (২২ জুন) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি লাউঞ্জে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে এ ঘোষণা করা হয়। 

ইউএন উইমেন ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহযোগিতায় আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট, ‘শুভ’ নামে বরিশালের স্থানীয় সংগঠন ও পবিপ্রবির যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে পবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত, প্রক্টর সন্তোষ কুমার বসু, ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেশন অ্যানালিস্ট (ইভিএডব্লিউ) তোসিবা কাশেম, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক, শুভ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হাসিনা বেগম নীলাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ডিন ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

অনলাইনে জুমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ডেপুটি পরিচালক মৌলী আজাদ ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজার ফারজানা সুলতানা অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।  এতে সঞ্চালনা করেন পবিপ্রবির বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড ফুড এনালাইসিস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পয়েন্ট সুজয় কান্তি মালী।

অনুষ্ঠানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত নীতিমালা উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পাপড়ি হাজরা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে পবিপ্রবি উপাচার্য ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, দেশের ৫২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২টি এবং ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭০টিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি রয়েছে।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে অনেক আইন আছে যার সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হয় না বলে তা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে না। তাই আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তা সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

ইউজিসির ডেপুটি ডিরেক্টর মৌলী আজাদ বলেন, অনেক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির নাম যখন ইউজিসিতে পাঠানো হয়, তখন দেখা যায় এমন অনেকে কমিটিতে থাকেন যাদের কমিটিতে আসলে প্রয়োজন নেই।

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে নারী সদস্যের আধিক্যের পাশাপাশি বাইরে থেকে যে দুইজন সদস্য রাখার কথা বলা হয়েছে, সেখানে জেন্ডারবিষয়ক দক্ষ ব্যক্তিকে রাখার অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি যাতে হাইকোর্ট নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকরী করা হয়, তা বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেশন অ্যানালিস্ট তোসিবা কাশেম বলেন, প্রকল্পটি শুরু হওয়ার আগে একটি জরিপ করা হয়, যেখানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছিলেন, যৌন হয়রানির শিকার হলে তারা কোথায় অভিযোগ করবেন, তা তারা জানতেন না। তাই এ নীতিমালা এবং কমিটি গঠন শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন,  প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা থাকা জরুরি। কারণ, নীতিমালা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নিজেই নির্যাতনের বিচার করতে সমস্যায় পড়ে যায়। কিন্তু নীতিমালার আলোকে সেই অভিযোগসমূহ তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা সহজ হয়। তা ছাড়া যারা নির্যাতন করে তাদের অনেকের বোধ-ই তৈরি হয় না যে তারা অপরাধ করছে। তাই এ নীতিমালা শিক্ষার্থীদের মাঝে সেই বোধ তৈরিতে সহায়ক হবে।

এএজে/আরএইচ