একটি ছবিকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামকে নিয়ে সাদা দলের ভেতর ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় একটি কর্মসূচিতে এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ.এস.এম মাকসুদ কামাল এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ছবি তুলে দেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার স্থির চিত্র নিয়ে বিএনপিপন্থী ছাত্র-শিক্ষকসহ দলের নেতাকর্মীরা সমালোচনা শুরু করেন।

বিএনপিপন্থী সাদা দলের শিক্ষকদের অভিযোগ, সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ওবায়দুল ইসলাম নীল দলের সঙ্গে ভেতর ভেতর আপস করে চলেন। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কলাম লেখার কারণে যেখানে বিএনপিপন্থী শিক্ষক চাকরিচ্যুত হন, তখন ওবায়দুল ইসলামের এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি ‘সুবিধাবাদী’ ও  বিএনপির ছদ্মবেশে ‘আওয়ামী লীগের এজেন্ট’।

এ বিষয়ে সাদা দলের একজন প্রভাবশালী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, অধ্যাপক এ.বি.এম ওবায়দুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ক্যাম্পাস থেকে সাদা দলের শিক্ষক ও ছাত্রদল বিতাড়নকারী প্রশাসনের ভিসি ও প্রো-ভিসিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি উপহার দিতে ব্যস্ত! নীল দলের কোনো শিক্ষক কি জিয়াউর রহমানের কোনো ছবি হাতে তুলতেন? দলের এত গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নেতাকর্মীদের তিনি আহত ও হতাশ করেছেন।

আরও পড়ুন : বাতিল হওয়া বগিতে থেকে গেল যাত্রী, চলে গেল ট্রেন

এই শিক্ষক আরও বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশের উপহারস্বরূপ অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলামকে অতিরিক্ত আরও এক বছর ক্লাবের সভাপতি রাখার জন্য ঢাবি ক্লাবের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা হয়। ওবায়দুল ইসলাম ক্লাবের সভাপতি অবস্থায় আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাবে নতুন নতুন প্রোগ্রাম আয়োজন করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সাদা দলের আরেক শিক্ষক বলেন, অধ্যাপক ওবায়দুল চাইলে বিষয়টা এড়িয়ে যেতে পারতেন। ওনি দলের চেয়ে ক্লাবের সভাপতি পদকে বড় করে দেখেছেন। তার এমন কর্মকাণ্ডে সাদা দলের প্রত্যেক শিক্ষক হতবাক এবং ক্ষুণ্ন হয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সম্পাদক হয়ে ওনার এ কাজ করা মোটেও উচিত হয়নি। এই জায়গায় যদি নীল দলের কেউ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি দিতেন তাহলে ঠিকই বহিষ্কার হতেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক এ.বি.এম ওবায়দুল ইসলাম নব্বইয়ের দশকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদানের পর তৎকালীন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হকের নেতৃত্বে দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। সমিতির মিটিংয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে উপস্থিত থেকে চেয়ার দখলে নিতেন।

সাদা দলের শিক্ষকরা বলছেন, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ছবি স্বহস্তে ভিসি ও প্রো-ভিসিকে উপহার প্রদান করে ওনার অতীত চরিত্রের সামান্য অংশই উন্মোচিত করলেন।

তবে অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বলছেন, একটি প্রতিযোগিতার নির্বাচিত ছবি ক্লাবের সভাপতি হিসেবে তিনি উপাচার্যের কাছে তুলে দিয়েছেন। এছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এর দ্বারা বুঝায় না যে তিনি অন্য দলের মতাদর্শ ধারণ করেন।

তবে সাদা দলের শিক্ষকদের অভিযোগ, ওই অনুষ্ঠানে ঢাবি শিক্ষক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নীল দলের শিক্ষক আব্দুর রহিমও উপস্থিত ছিলেন। ওবায়দুল ইসলাম ছবিটি তার (আব্দুর রহিম) হাত দিয়ে উপাচার্যের কাছে দিতে পারতেন।

আরও পড়ুন : যেভাবে বাংলাদেশ রেলে ভ্রমণ করেন ‘পুতিন’ ও ‘কিম’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্লাবের পক্ষ থেকে একটা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ছিল। বিচারকরা যাচাই করে সেরা তিনটা ছবি বাছাই করেন। সে ছবিগুলো ভিসি, প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারারকে উপহার দেওয়া হয়েছে। ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী, সভাপতি হিসেবে সেগুলো আমি তুলে দিয়েছি।

কোন চিত্রকর্ম প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সেটা তিনি জানতেন না উল্লেখ করে বলেন, এটার ওপর আমার কোনো কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) ছিল না। আমি শুধুমাত্র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। বিচারকদের বাছাই করা ছবি ক্লাবের প্রথা অনুযায়ী তাদের উপহার দেওয়াতে বুঝায় না যে —আমি অন্য মতাদর্শ ধারণ করি।

নীল দলের সঙ্গে সখ্য থাকার বিষয়ে সাদা দলের এ নেতা বলেন, এটা মিথ্যা কথা। আমি ছাত্রদল করা ছেলে, আমার আদর্শ এটাই।

এইচআর/এসকেডি