২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে আবেদন আহ্বান করেছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষক পদে আবেদন করতে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ স্কেলে) এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সিজিপিএ ৩.৫০ (৪.০০ স্কেলে) থাকার শর্ত ছিল সেই বিজ্ঞপ্তিতে। 

তবে বিশেষ যোগ্যতা থাকলে যেকোনো একটি শর্ত আংশিক শিথিল করা হয়। সেই সঙ্গে পুরো শিক্ষা জীবনে তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত প্রত্যেকটি শর্ত ভেঙে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পান নকিবুল হাসান খান। ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। 

জানা গেছে, ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ জিপিএ ৫.০০ স্কেলে ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন নকিবুল হাসান। এরপর ২০০৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ পান ৩.৫০, যার চতুর্থ বিষয় ছাড়া ফলাফল দাঁড়ায় জিপিএ ৩.২০। এই ফলাফলে বিজ্ঞপ্তির নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ না থাকলেও পেয়েছেন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ।  

আবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এইচএসসি পাস করলেও গণিত ব্যতীত অন্য বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কোর্সে পেয়েছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি। অন্যদিকে ইংরেজিতে পেয়েছিলেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি। রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রেও নকিবুল হাসানের উল্লেখিত একাডেমিক তথ্যের সত্যতা মিলেছে। 

সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স  অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আশরাফ আলীর বিভাগের অফিস কক্ষে তালা দিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় আলোচনায় এসেছে বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক নকিবুল হাসান খানের নাম।  

এদিকে অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম এবং অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবীবের মাধ্যমেই এই নিয়োগ পেয়েছিলেন নকিবুল হাসান খান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম বলেন, আমার এগুলো মনে নেই। যা তথ্য রয়েছে সংরক্ষিত রেজিস্ট্রার দপ্তরে সে অনুযায়ীই কাজ হয়েছে। দায়িত্ব শেষ করার পর আমার আর কোনো দায়িত্ব নেই। তাই বর্তমানে যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলুন। যা তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে সেভাবেই হয়েছে নিয়োগ। 

একই সঙ্গে নিয়োগ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে মন্তব্য করেছেন এহসান হাবীব। তিনি বলেন, নকিবের সব কিছু ঠিকই আছে বলে আমি জানি। তবে এই নিয়োগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সাবেক রেজিস্ট্রার ফজলুল কাদের চৌধুরী। 

নকিবুল হাসান খান ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র। অভিযোগ রয়েছে, সরাসরি তার এক শিক্ষকের সম্পৃক্ততাও ছিল নিয়োগ বোর্ডের এক্সপার্ট হিসেবে। তিনি হলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম। এ নিয়োগের বিষয়ে যোগাযোগ করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি এই অধ্যাপকের। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটে থাকলে নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ নেই। আর এই নিয়োগের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই পূর্বের এই তথ্য নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। 

নকিবুল হাসানের একাডেমিক ফলাফলের তথ্যের বিষয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. আশরাফ বলেন, গত আপগ্রেডেশন সভায় নকিবুল হাসান খানের একাডেমিক রেজাল্টের অসঙ্গতি দেখতে পেয়েছি। এর আগে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। 

এ বিষয়ে বিশেষ যোগ্যতায় নিয়োগ পাওয়া মো. নকিবুল হাসান খানের মন্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এরপর খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার কোনো সাড়া মেলেনি।

নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বে তো অনেক কিছুই হয়েছে। সেটি নিয়ে আমি বলতে চাই না। তবে আমার দায়িত্বের সময়ে এমন করে নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো নিয়োগ তো দূরের কথা, কোনো কাজই করা হবে না। এ রকম নিয়োগ হয়ে থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাম্য নয়। 

উবায়দুল হক/আরএআর