ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) অন্তর্ভুক্ত একটি বিভাগে লেকচারার পদে শিক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ ফলধারীদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় নিয়োগের সুপারিশের অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি ইনস্টিটিউটের অধীনে পাঁচটি বিভাগের ছয়টি শূন্যপদে নিয়োগ আহ্বান করা হয়। তার মধ্যে একটি বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফলধারী ও একাধিক গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে এমন অন্তত পাঁচ জনকে বাদ দিয়ে তুলনামূলক নিম্নমানের ফলধারী একজনকে নিয়োগের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রশাসন ও নেতৃত্ব বিভাগে স্থায়ী ও অস্থায়ী এ দুটি পদে শূন্য স্থায়ী সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে লেকচারার পদে এ নিয়োগ আহ্বান করা হয়। যেখানে একটি পদে রোবেল আহম্মেদ নামের একজনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।

নির্বাচিত এই প্রার্থীর অনার্সে রেজাল্ট ৩.৬৯ এবং মাস্টার্সে ৩.৮৩। একাডেমিক রেকর্ডে তার গবেষণা ও প্রবন্ধ রচনার ঝুলি শূন্য। অপরদিকে একাডেমিক উৎকর্ষতায়, প্রবন্ধ ও গবেষণায়, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় তার থেকে এগিয়ে থাকা পাঁচ প্রার্থী বাদ পড়েছেন।

তাদের মধ্যে একজন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা শিক্ষার্থী, যার অনার্স ও মাস্টার্সের সিজিপিএ যথাক্রমে ৩.৯১ এবং ৪.০০। জি এম রাকিবুল ইসলাম নামের ওই প্রার্থীর গবেষণা ও প্রকাশনা রয়েছে ৯টি এবং রয়েছে ৯ বছরের শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা। তিনি বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত।

এছাড়া আবু হানিফ নামের এক প্রার্থী ময়মনসিংহের একটি কলেজে সাড়ে চার বছর ধরে অধ্যাপনা করছেন। তার অনার্স ও মাস্টার্সের রেজাল্ট যথাক্রমে ৩.৮৩ ও ৩.৯৮। ওমর ফারুক নামে আরেকজনের অনার্স মাস্টার্সের রেজাল্ট যথাক্রমে ৩.৮৩ ও ৩.৯৫, গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে দুটি। মোহাম্মদ রাসেল উদ্দিনের অনার্স ও মাস্টার্সের রেজাল্ট যথাক্রমে ৩.৫০ ও ৩.৯৫, গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে ১০টি। তিনি ২০১৭ সালে জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমআইএসসি ও ২০২০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাদের বাদ দিয়ে রোবেল আহম্মেদকে নিয়োগের ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে।

এমন যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে তুলনামূলক নিম্নমানের রেজাল্টধারী রোবেলকে নির্বাচন করায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন অন্য প্রার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় গবেষণার ওপর। এখানে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের থিসিস করানো হয়। কিন্তু এমন একজন লোক যার কোনো গবেষণা প্রবন্ধ নেই, মাস্টার্সে থিসিস করার যোগ্যতা ছিল না যার, সে কীভাবে এখানে এসে শিক্ষার্থীদের থিসিস করাবে?

আরেক প্রার্থী বলেন, রোবেল আহম্মেদ ছাত্রলীগে পদ পাওয়ার জন্য দুই বছরে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া ভাইভা বোর্ডে ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহলুল মাজনুন চুন্নু। তিনি বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। সেই সঙ্গে ভাইভা বোর্ডে ছিলেন আওয়ামীপন্থি প্রভাবশালী একজন শিক্ষকও। এ নিয়োগের সুপারিশটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়েছে।

সূত্র জানায়, রোবেল আহম্মেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে তিন বছর ধরে অধ্যাপনা করে আসছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নির্বাচিত হন। ৩০ থেকে ৩৫ জন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের রেজাল্ট নিয়ে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদধারী ছিলেন বলে জানা যায়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রোবেল আহম্মেদ বলেন, আন্তর্জাতিক জার্নালে আমার একটি আর্টিকেল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু লেকচারার নিয়োগে এই তথ্য চাওয়া হয় না বলে আমি তা সিভিতে উল্লেখ করিনি। সিলেক্টেড হওয়ার বিষয়টি আমি এখনও জানি না। তবে আমি ভাইভা খুব ভালো দিয়েছি এবং আমি আশাবাদী যে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ভাইভা বোর্ডের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাকে সুপারিশ করা হয়েছে তার ভাইভা ভালো হয়েছে, এক জায়গায় শিক্ষকতা করছেন, আইইআর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঠিক উত্তর দিয়েছে এবং ইনস্টিটিউট থেকে তাকে চাওয়া হয়েছে। অনার্সের ফলাফলে সে একটু পিছিয়ে কিন্তু মাস্টার্সে তার ফলাফল ভালো। ভাইভায় যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে সে ভালো করেছে এবং একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবেও আছেন। এসব কিছু বিবেচনা করেই সর্বসম্মতিতে তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সে (রোবেল আহম্মেদ) মাস্টার্স দুই বছরে সম্পন্ন করেছে— এ তথ্য আমার জানা নেই। এমন কিছু হয়ে থাকলে ইনস্টিটিউট থেকে জানানোর কথা। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে জানায়নি। যিনি ম্যানচেস্টার থেকে মাস্টার্স করেছে তার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ হয়নি বলে ইনস্টিটিউট থেকে জানানো হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগ/ইনস্টিটিউটের চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

এইচআর/এসএসএইচ