মানিক চন্দ্র দাস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার কর্মচারী নিয়োগের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে তিন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেজিস্ট্রার অফিসের নিম্নমান সহকারী মানিক চন্দ্র দাশের বিরুদ্ধে।

এ সংক্রান্ত দুটি ফোনালাপে শোনা যায় টাকা ফেরত চাওয়ায় উল্টো এসব চাকরি প্রার্থীকে হুমকি দিয়েছেন মানিক চন্দ্র। পাঠকদের জন্য ফোনালাপটি তুলে ধরা হলো-

মানিক চন্দ্র দাস : তুমি আমারে চিনো? একদম খাইয়া ফেলবো, একদম পেটের মধ্যে মোচড় দিয়া খাইয়া ফেলবো তোরে।

প্রার্থী : আচ্ছা দেখা যাবে।

মানিক চন্দ্র দাস : পেটের মধ্যে মোচড় দিয়া খাইয়া ফেলবো কিন্তু একদম। পার্সোনাল বিহেবিহার ঠিক করতে না পারলে খাইয়া ফেলব একদম।

প্রার্থী : যত টাকা নিছেন, সব টাকা এই মাসের মধ্যেই দিবেন।

মানিক চন্দ্র দাস : এই বেটা কিসের টাকারে তোর, তুই জুলাইয়ের আগে এক টাকাও পাবি না। শোন তুই পরীক্ষা দিছোস তোর এপ্লিকেন্ট পরীক্ষা দেক, তখন যদি না হয়, তুই ফুল টাকা পেয়ে যাবি একসাথে।

প্রার্থী : না, এই মাসের মধ্যেই দিবেন।

আরেকটি ফোনালাপের কথোপকথন:

প্রার্থী : গেছে ৫০?

মানিক চন্দ্র দাস : গেছে। তবে ভেজাল বাজায় দাও তুমি। ওইখানে ১০০ টাকা কেন চার্জ কেটে ফেলছে। চার্জসহ দিবা না। ৫০০ টাকা ঘটকা লাগায়ছো আমার।

প্রার্থী : তাইলে টোটাল কত হইল?

মানিক চন্দ্র দাস : টোটাল বাসায় গিয়ে হিসেব করো। সাত ৭০ এর লগে ৫০।

প্রার্থী : ৮ লাখ ২০ হাজার।

মানিক চন্দ্র দাস : হ্যাঁ। ঠিক আছে।

জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ মে ও ১ জুন দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে নিম্নমান সহকারী ও অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মাদারীপুরের রাকিব ফরাজী, সোহেল খান ও মাকসুদুল সালেহীনের কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন মানিক।

টাকা লেনদেনের স্লিপে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৫ জুন ৫০ হাজার টাকা, ১১ জুলাই ৩৫ হাজার টাকা, ১৫ জুন ৫০ হাজার টাকা ও ৩ মে আরও ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয় প্রার্থীদের কাছ থেকে। মানিকের ডাচ্ বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ৭০৮১ এর মাধ্যমে এই টাকাগুলো নেওয়া হয়। তবে চাকরি না পেয়ে প্রতারণার অভিযোগে ও টাকা ফেরত চেয়ে গত ২৫ জুলাই মানিককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান এক প্রার্থী।

মাকসুদুল সালেহীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানিক আমাদের তিনজনের কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। তার স্ত্রী আমার ছাত্রী। এটাকে ব্যবহার করে সে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমি টাকা ফেরত চাইলে মানিক আজকে দিব, কালকে দিবে বলে ঘুরাতে থাকে। একপর্যায়ে হুমকিও দেয় সে। পরে আমি টাকা চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি মানিকের কাছে।

আরেক প্রার্থী সোহেল খান বলেন, আমার কাছ থেকে মানিক চন্দ্র দাস সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। চাকরির নাম দিয়ে সে প্রতারণা করেছে। আমিও লিগ্যাল নোটিশ পাঠাব শিগগিরই।

এ বিষয়ে জানতে মানিক চন্দ্র দাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, এদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রশাসনকে বিপাকে ফেলতে তারা এসব কর্মকাণ্ড করছে। আমরা কাউকে ছাড় দিব না। কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব। 

এর আগে গত ৩ মার্চ ফার্সি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত তিনটি অডিও ফাঁস হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির পদে ১২ লাখ, চতুর্থ শ্রেণির পদে ৮ লাখ, অফিসার পদে ১৫ লাখ ও শিক্ষক নিয়োগে ১৬ লাখ টাকার ওপরে লেনদেন হয় বলে ওঠে আসে। এ ঘটনায় ৭ জুলাই উপাচার্যের সাবেক পিএস খালেদ মিসবাহুল মোকর রবীনকে পদাবনতি ও কর্মচারী আহমেদ হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। 

রুমান/আরএআর