বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন শফিউল্লাহ লিখন। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ পরীক্ষায় সারা দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে মোট ১০২ জন শিক্ষার্থী। তিনি দুই বার ভাইভা থেকে ফেরত এলেও হাল ছাড়েননি, তৃতীয়বারে সাফল্য অর্জন করেছেন। এখন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা তিনি।

শফিউল্লাহ লিখনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বামুনখালিতে। সেখানেইও বেড়ে ওঠা। তার বাবা নূরুল হুদা ও মা রাবিয়া খাতুন। গ্রামের ঐতিহ্যবাহী গফরগাঁও জে এম কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল (মাধ্যমিক) ও একই প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম (উচ্চমাধ্যমিক) পাস করেন তিনি। উভয় পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

শফিউল্লাহ লিখন বলেন, আমার বড় হওয়ার পেছনে বাবা-মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। কেননা, বাবা অতি সাধারণ কৃষক আর মা গৃহিণী। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও আমাদের সবাইকে শিক্ষিত করেছেন। বাবাকে কোনো কাজে সাহায্য করতে গেলে তিনি বলতেন, আমার কাজ করুন লাগতো না, তোকে বড় সাইব (বড় অফিসার) হওয়া লাগবে। কষ্টের সংসারেও আমার সব সখ পূরণ করে গেছেন।

তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। ছোট বেলা থেকেই টিউশনি করেছি, সেখান থেকেই শিক্ষক পেশার প্রতি ভালো লাগা। শিক্ষক হতে না পারলেও আইনের ছাত্র হিসেবে আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেয়েছিলাম, সেটি পূরণ হয়েছে।

পরিশ্রমই সাফল্য এনে দিয়েছে সফিউল্লাহ লিখনকে। তিনি বলেন, নিয়মিত পরিশ্রম আমার বিচারক হতে সবচেয়ে কাজে লেগেছে। ছোট বেলা থেকেই গুছিয়ে পড়ার অভ্যাস ছিল। না বুঝে কখনও কিছু মুখস্থ করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের লেকচার নোট করে পড়তাম। পরীক্ষার আগে রিভাইস দেওয়ার সুবিধার্থে ছোট ছোট কাগজে নোট করে বইয়ের পাশে পিন মেরে রাখতাম। প্রতিদিন পড়ার চেষ্টা করতাম।

তিনি বলেন, মোট তিন বার ভাইভা দিয়েছি। এর আগে দুইবার ব্যর্থ হয়েছিলাম। কোনো কিছু না পাওয়ার মাঝেই হতাশা থাকে। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। তবে কঠিন সময়ে পরিবারের সবাইকে পাশে পেয়েছি।

বিচারক হিসেবে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে চান শফিউল্লাহ লিখন। তিনি বলেন, মানুষ সৃষ্টিকর্তার পরেই পেশাগত দিক থেকে বিচারক ও ডাক্তারদের ওপর বেশি আস্থা রাখেন। আমি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিচার প্রার্থীদের আস্থার সেই সঠিক প্রতিদান দিতে চাই। আইনের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই।

যারা বিচারক হতে চায় তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার পরামর্শ থাকবে সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। মেধাবী হওয়ার চেয়ে বেশি পরিশ্রমী হতে হবে। আইনের বিষয়গুলো ভালোবেসে ও বুঝে বুঝে পড়তে হবে। সাধারণ বিষয়গুলোও গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেকে এগিয়ে রাখতে বুদ্ধিদীপ্ত পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।

রাকিব হোসেন/এসএসএইচ