খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য হিসেবে চার বছরের মেয়াদকাল শেষ করেছেন প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন। উপাচার্য হিসেবে তার মেয়াদ ১২ আগস্ট থাকলেও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বৃস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি শেষ কার্যদিবস সমাপ্ত করেন।  

বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভা কক্ষে বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের-সকল অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্ট, পরিচালক, চেয়ারম্যান ও দপ্তর প্রধানদের সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিকতার সঙ্গে সফলভাবে উপাচার্য হিসেবে তার চার বছরের মেয়াদের শেষের কার্যদিবসে বিকেল ৫টায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়।

শেষ কার্যদিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, উপাচার্য পদে আমাকে চার বছর কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার দায়িত্বকালে আমি শিক্ষকতার জায়গা থেকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ঠিক রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবিক প্রয়োগ ঘটানোর চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশের ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন, ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে সর্বোপরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধশালী, সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপিঠ কুয়েট আগামীতে উন্নত ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ার কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি। গত চার বছরে সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

কুয়েট সূত্র জানায়, কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। তার চার বছরের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বের মেয়াদে কুয়েট ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) বাস্তবায়নে ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয় স্থান অবস্থান করে। নাসার স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় কুয়েট শিক্ষার্থীদের টিম।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’। ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪র্থ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও আদান-প্রদানের লক্ষ্যে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কুয়েটের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তিসহ উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। করোনা মহামারিতে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম সচল ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে স্বাভাবিক ছিল।

কুয়েটে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্নার। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কনফারেন্স। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি হাই ইমপ্যাক্ট জার্নালে রিসার্চ পেপার প্রকাশের জন্য কুয়েটে প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড। মুজিব শতবর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া হয়েছে সংবর্ধনা এবং প্রকাশিত হয়েছে মুজিববর্ষের স্মরণিকা ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের দাবি, উপাচার্য পদে কুয়েটিয়ানদের মধ্যে থেকে নিয়োগ দেওয়া হোক। বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পর ৪ বছর মেয়াদে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেবেন চ্যান্সেলর। বিধি মোতাবেক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে গ্রেড-১ তালিকাভুক্ত অধ্যাপকদের পূর্বে কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যদিও বিগত সময়ে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর দুই বার কুয়েটের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে গ্রেড-১ তালিকাভুক্ত ২৮ জন অধ্যাপক রয়েছেন। এর মধ্যে কুয়েটিয়ান ১০ জন রয়েছেন। 

২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট উপাচার্য হিসেবে নিয়োগাদেশ পান বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন। তার মেয়াদকাল শেষ হওয়াই ইতোমধ্যে উপাচার্য হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেকে ।

কুয়েটের উপাচার্য হওয়ার তালিকায় আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন। যিনি কুয়েটিয়ান এবং গ্রেড-১ পদধারী। এছাড়া কুয়েটিয়ান এবং গ্রেড-১ শিক্ষকরা হলেন- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর ড. খন্দকার আফতাব হোসেন ও প্রফেসর ড. এএনএম মিজানুর রহমান, সিএসইর প্রফেসর ড. এমএমএ হাসেম, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর ড. কাজী হামিদুল বারী, ইইই’র প্রফেসর ড. মুহা. রফিকুল ইসলাম, ড. আশরাফুল গণি ভূঁইয়া, ড. আবদুর রফিক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাইফুল ইসলাম ও প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শাহজাহান আলী।

কুয়েটিয়ানের বাইরেও আলোচনা রয়েছেন ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রফেসর ড. পল্লব কুমার চৌধুরী। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন রুয়েটিয়ান এবং গ্রেড-১ পদধারী মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর ড. মিহির রঞ্জন হালদার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর ড. মো. হারুনুর রশীদ। 

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর