সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। 

এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) সভাপতি বেলাল হোসেন চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল প্রশাসনের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ আচরণ না করায় তদন্ত কমিটির গাফিলতি খতিয়ে দেখা ও আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে নেওয়া। দাবিগুলো না মানলে আগামী রোববার (৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ঘোষণা দেন তিনি।

জাবিসাসের সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল রনি, ছাত্রফ্রন্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কনৌজ ক্রান্তি রায়, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা জহির ফয়সাল, কালের কণ্ঠের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শুভ আনোয়ার, জাবিসাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা জহির ফয়সাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চামড়া গন্ডারের মতো হয়ে গেছে। লজ্জার সঙ্গে বলতে হয় এই প্রশাসনের গাফিলতির জন্যই জাতির বিবেক সাংবাদিকদের ও মানববন্ধন করতে হয় সুষ্ঠু বিচারের জন্য। প্রশাসন বলেছে, গণরুম সংস্কৃতি রোধে জিরো টলারেন্স, কিন্তু কোনো হল প্রশাসন এই ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করছে না। হলের সিট বণ্টনে প্রশাসন কোনো ভূমিকা পালন করে না। হলের সিট লিস্ট করা, বণ্টনে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন পূর্ণভাবে হস্তক্ষেপ করে। এই অথর্ব প্রশাসন যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতে নাই পারে তাহলে তাদের উচিৎ পদত্যাগ করা।

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম বলেন, হলগুলো প্রশাসন চালায় না, চালায় ছাত্রলীগ। প্রশাসন শুধু দাপ্তরিক কাজগুলো কোনোমতে করছে। হলের আসন দখলে রেখে ছাত্রলীগ আসন সংকট সৃষ্টি করেছে। আজকের এই মানববন্ধন থেকে আমার দলের পক্ষে আমি বলতে চাই, অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের ধারা অনুযায়ী সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক রনি বলেন, যখন সাংবাদিককে গেস্টরুমে পেটানো হয়, তখন হল প্রশাসন কোথায় ছিল। আসলে হল প্রশাসন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের লেজুড়বৃত্তি করে। পাঁচ দিনের মধ্যে নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ একটা মাস পার হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। আসলে তদন্ত কর্মকর্তারা সাংবাদিকের দোষ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। আজকে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন  একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজনের দোষ আরেকজন ঢাকার চেষ্টা করে। আমরা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানায়।

জাবিসাসের সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ভুক্তভোগীর কোনো বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়নি, অভিযুক্তদের বক্তব্য বিস্তারিত উঠে এসেছে, কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংকোচন করা হয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি।

প্রসঙ্গত, গত ২ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ‘গেস্ট রুমে’ ডেকে নিয়ে মোহাম্মদ রুবেল নামে এক সাংবাদিককে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হলটির ৮ ছাত্রলীগ নেতাকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে ‘অবাঞ্ছিত’ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, ৪৭তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ্ এবং ৪৮তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।

এছাড়া অভিযুক্ত এসব ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক। তবে দীর্ঘ সময় পার হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ রুবেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ক্যারিয়ারটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম নামে একটি নিউজ পোর্টলের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। 

আলকামা/আরএআর