সবুজে ঘেরা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাস। সারা বছরই এ ক্যাম্পাস সেজে থাকে নানা রূপে। আর শীত এলে সে রূপ বেড়ে যায় বহুগুণ। এ সময় অতিথি পাখির আগমনে প্রাণের ছোঁয়া লাগে পুরো ক্যাম্পাসে। শীতের আগমনী বার্তা নিয়েই রাবি ক্যাম্পাসে এসেছে শামুকখোল বা শামুকভাঙা পাখি। মুন্নুজান হলের সামনে ও তাপসী রাবেয়া হলের পেছনের গাছগুলোতে তাদের দেখা গেছে। দিন যত যাচ্ছে তাদের সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রাথমিক অবস্থায় ২০-২৫টি পাখি দেখা গেলেও বর্তমানে শতাধিক পাখি অবস্থান করছে। এর আগে শামুকখোল পাখিগুলোকে অবস্থান করতে দেখা গেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক)। সম্প্রতি সেখানে গাছ নিধনের ফলে তারা এখন রামেক ছেড়ে অবস্থান নিচ্ছে রাবিতে। 

পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের শেষ দিকে হিমালয়ের উত্তরে প্রচণ্ড শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, নেপাল, মঙ্গোলিয়া, চীন ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। এসব অঞ্চলে শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে।

এ সময় হাজারো পাখি বাংলাদেশেও আসে। তার মধ্যে কয়েক বছর ধরে এ পাখির দেখা মিলছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক)। কিন্তু এ বছর সেখানে গাছ কাটার ফলে তারা এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছে।

মার্কেটিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউণ্ডেশনের পার্মানেন্ট রেসকিউয়ার মো. নাজমুল হোসেন, গত এক সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণ শেষে ঢাকা পোস্টকে জানান, পাখিগুলোকে বর্তমানে মুন্নুজান হলের সামনের গাছগুলোতে কলোনি করে থাকতে দেখা গেছে। তবে তারা এখনও সেখানে বাসা তৈরি করেনি। তারা মূলত রেস্টিং কলোনি করে আছে। 

তবে আমরা যদি তাদেরকে কোনো সমস্যা না করি তবে তারা এখানে ব্রিডিং কলোনি তৈরি করবে। যেমনটা তারা রাজশাহী মেডিকেলে করেছে। কলোনিগুলো সাধারণত দুই ধরনের করে থাকে- রেস্টিং ও ব্রিডিং। প্রাথমিকভাবে তারা রেস্টিং কলোনি করে থাকে এবং নিজেদের সুরক্ষিত মনে করলে তারা ব্রিডিং কলোনি করে প্রজনন করে।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয় নিয়ে আমরা উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের সেগুলো দেখে রাখতে বলেছেন এবং কেউ যেন সেগুলো শিকার বা কোনো পুকুরে বিষ না দেয় সে জন্য একটা লিখিত আবেদন পত্র দিতে বলেছেন।

এ ছাড়া ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার জানান, তাপসী রাবেয়া হল ও রহমতুন্নেসা হলের পেছনের গাছগুলোতে এক প্রজাতির পানকৌড়ি ও নিশিবক কলোনি তৈরি করে থাকছে। এখানে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি পাখি অবস্থান করছে বলে জানান এই শিক্ষার্থী।

পাখিদের বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান উল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শামুকখোল পাখিগুলো আগে রামেকে অবস্থান করত। তবে এখন তারা আমাদের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিচ্ছে। এখানে পাখিদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও প্রজননের ব্যবস্থা আছে। পাখিদের সুরক্ষার জন্য দ্রুত সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙানো হবে। লিস দেওয়া পুকুরগুলোতে যেন বিষ না দেয় সেজন্য আগেই সতর্ক করে দেওয়া হবে। এই পাখিগুলোকে যেন কেউ বিরক্ত না করে সেজন্য সবসময় মনিটরিং করা হবে।

প্রসঙ্গত, শামুকখোল পাখির ইংরেজি নাম Asian Openbill আর বৈজ্ঞানিক নাম Anastomus oscitans। এই পাখির ঠোঁটের সঙ্গে অন্য কোনো পাখির ঠোঁটের মিল নেই। শামুকখোল পাখির ঠোঁটের নিচের অংশের সঙ্গে ওপরের অংশে বড় ফাঁক। এরা এই বিশেষ ঠোঁটে শামুক তুলে চাপ দিয়ে শামুকের ঢাকনা খুলে ফেলে এবং ভেতরের নরম অংশ খেয়ে নেয়। মূলত শামুকের ঢাকনা খোলার শৈল্পিক কৌশলের কারণেই এই পাখির নাম করণ করা হয়েছে শামুকখোল পাখি।

আরআই