সাত কলেজের আওতাভুক্ত কবি নজরুল সরকারি কলেজ

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নতি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে অধিভুক্তির পর থেকে তীব্র সেশনজট, দেরিতে ফল প্রকাশ, ভুলে ভরা ফলাফল, গণহারে ফেল, পরীক্ষা দিয়েও অনুপস্থিত, একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, পর্যাপ্ত ক্লাস না হওয়াসহ নানান অভিযোগে বারবার আন্দোলনে নেমেছে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তাদের অভিযোগ বা সমস্যা শোনার কেউ নেই। যেকোনো সমস্যায় অগোছালোভাবে একে অন্যের (কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ওপর) ওপর দায় দেয়। এমন দোটানায় বলির পাঁঠা হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

২০১৯-এর এপ্রিল মাসে এসব সমস্যা সমাধান চেয়ে নীলক্ষেত অবরোধ করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা বৈঠকও হয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেয়। এছাড়াও অভিযোগ গ্রহণ, পর্যালোচনা ও নিষ্পত্তির জন্য সাতটি কলেজেই শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ডেডিকেটেড ডেস্ক’ বসানো হবে বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ।

তবে শিক্ষার্থীদের এসব চাওয়া এখনও আশ্বাসেই আটকে আছে। ‘ডেডিকেটেড ডেস্ক’ চালুর সিদ্ধান্তের পর প্রায় দুই বছর কেটে গেলেও সেই সিদ্ধান্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।

এতে ফলাফলের ভুল সংশোধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়েই যেতে হচ্ছে তাদের। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষা দিলেও অনেক শিক্ষার্থীর ফলাফলে এক বা একাধিক বিষয়ে অনুপস্থিত দেখায়।

এতে করে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে হাজিরা খাতার ফটোকপি সংগ্রহ করে লিখিত আবেদন সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হয়। শিক্ষার্থীর লেখা ওই আবেদনপত্রে নিজ কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষরও আবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। করোনাকালে ভোগান্তি নিরসনে ব্যবস্থা করা হয়েছে অনলাইন আবেদনের।

ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন তাদের কলেজের অফিস সহায়করা পুরোপুরি জানেন না। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। আবেদন জমা দেওয়া বা অফিসিয়াল কাজের জন্য তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়েই যেতে হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছিল, ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু হলে শিক্ষার্থীর আবেদন জমা বা অফিসিয়াল কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে না। শিক্ষার্থীরা তাদের কাগজপত্র নিজ কলেজের ডেডিকেটেড ডেস্কের দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়কের কাছে জমা দিলেই তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যাবে।

এ বিষয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মামুন সোহাগ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে করতে হচ্ছে। অথচ ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু থাকলে সেটা কলেজে জমা দিলেই হতো। দীর্ঘদিনেও এটা চালু হয়নি। আমরা চাই, প্রত্যেক কলেজে এটা চালু হোক। যাতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে।’

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ‘এত দিনেও ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু না হওয়া দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে এটা করবে। কিন্তু আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষ এটা করেনি। আমরা চাই এটা দ্রুত চালু হোক।’

তবে কলেজ প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, লোকবল সংকটের কারণে তারা ‘ডেডিকেটেট ডেস্ক’ চালু করতে পারছে না।

অধিভুক্ত সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্ল্যাহ খোন্দকার এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়।  বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের এত বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা, কর্মচারী নেই। আমরা চাইলেও এটা করা সম্ভব হচ্ছে না।’

সাত কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে শিক্ষক এবং কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানোসহ সরকারের বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া সাত কলেজের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

এফআর